আলিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দেড় মাস আগেই

পাঁচ বছর বয়সী শিশু আলিনা ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে হত্যার পর আবির লাশটি মায়ের অজ্ঞাতে তাঁর বাসায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। এরপর নিজেই আলিনার মা–বাবার সঙ্গে মিলে আলিনাকে খুঁজতে থাকেন। আবির এ হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন দেড় মাস আগেই।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে আবির মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানেই আবির এসব কথা বলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবিরকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি খুনের পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।

পিবিআই সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আবির বলেন, দেড় মাস আগে আলিনাকে গুম করে তার পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আবির। এর আগেও তিনি কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বাসার আশপাশের লোকজন থাকায় কিছু করতে পারেননি।

আলিনার জন্মের আগ থেকে তাদের বাসায় ভাড়া থাকেন আবিরের মা–বাবা। আলিনাকে তিনি নিজেও আদর করতেন। খুনের কারণ সম্পর্কে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা আবির জবানবন্দিতে বলেন, মা–বাবার খারাপ সম্পর্ক, মায়ের চাকরি চলে যাওয়া, নিজে কিছু করতে না পারা এবং হঠাৎ বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে থেকে তিনি এমনটা করেছেন। তিনি ২০ লাখ টাকা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে ভাড়া দেবেন বলে চিন্তা করেন। তাই আলিনাকে খুন করে এ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেন।

আরও পড়ুন
আবির মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম প্যাট্রল ও সিআইডি দেখে আলিনাকে খুনের ঘটনা রপ্ত করার কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেন আবির। তিনি বলেছেন, আলিনাকে ঘটনার দিন (১৫ নভেম্বর) মক্তব্যে পড়তে যাওয়ার সময় তাদের ভাড়া বাসায় (আবিরের বাবা ভাড়া থাকেন) নিয়ে যান। এরপর গলাটিপে ও মুখে হিজাব পেঁচিয়ে খুন করেন। পরে বাসার অন্যান্য মালামালের সঙ্গে একটি ব্যাগ ভর্তি করে আলিনার লাশ পার্শ্ববর্তী আকমল আলী রোডে মায়ের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। এ সময় আরিবের মা বাসায় ছিলেন না।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবিরের মা-বাবা আলাদা থাকছেন। আবির লাশটি মায়ের বাসায় শৌচাগারের ওপর জিনিসপত্র রাখার জায়গায় লুকিয়ে রাখেন। সন্ধ্যার পর তিনি আলিনাদের বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। এরপর বাসায় ফিরে আলিনাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে মা ও বোনকে আলিনার বাসায় পাঠান। এরপর তিনি লাশটিকে ছয় টুকরা করে পলিথিনে ভরে রাখেন। পরদিন নগরের বন্দরটিলা বে টার্মিনাল সাইনবোর্ড এলাকায় ও আকমল আলী ঘাট স্লুইসগেট এলাকায় খণ্ডিত লাশ ফেলে দেন।

গত ৩০ নভেম্বর বন্দরটিলা আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন স্লইসগেট এলাকা থেকে দুটি পা এবং পরদিন একই এলাকা থেকে আলিনার মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

আরও পড়ুন

নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় আলিনাদের বাসা। তার বাবা সোহেল রানা। তিনি স্থানীয় একটি মুদিদোকানের মালিক। আলিনা নিখোঁজের ঘটনায় প্রথমে জিডি, পরে ইপিজেড থানায় মামলা করেন তার বাবা। ২৫ নভেম্বর আবিরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পরে তাঁর মা, বাবা ও বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক মনোজ দে প্রথম আলোকে বলেন, জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে আবিরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আলিনার লাশের বাকি অংশটুকু উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।

শিশু আলিনার বাবা সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে খুন করে আবির আমাদের সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে অংশ নিয়েছিল। কোনো দিন ভাবিনি, আমার মেয়েকে খুন করবে। তাকে চাচ্চু বলে ডাকতো মেয়েটা। কীভাবে তার লাশ ছয় টুকরা করল? একটাই চাওয়া, আবিরের ফাঁসি।’

আরও পড়ুন