ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ট্রেনের ভাড়া সর্বনিম্ন ৫০০, সর্বোচ্চ ১৭২৫ টাকা
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নতুন রেলপথ উদ্বোধন হয়েছে। ঢাকা থেকে যাত্রী ভাড়াও নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনটির নাম কী হবে, নিশ্চয় আগ্রহ আছে সাধারণের? এটি এখনো চূড়ান্ত না হলেও নিশ্চিত থাকতে পারেন এর সঙ্গে সেখানকার সমুদ্র-প্রকৃতি জড়িয়ে থাকছে!
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পথে যে ট্রেন চলাচল করবে এর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ছয়টি নাম প্রস্তাব করেছে। এগুলো হচ্ছে প্রবাল এক্সপ্রেস, হিমছড়ি এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, ইনানী এক্সপ্রেস, লাবণী এক্সপ্রেস ও সেন্ট মার্টিন এক্সপ্রেস।
এর মধ্য থেকে প্রথম ট্রেনের জন্য একটি নাম চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে নির্মাণ করা করা হয়েছে আইকনিক স্টেশন। এই স্টেশনে প্রথম যে ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে যাবে, এর নাম দু-এক দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন বলে রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে একটি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজারের মধ্যে আসা-যাওয়া করবে। ট্রেনটি পথে একমাত্র ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে থামবে। তবে বিমানবন্দর থেকে যাত্রী তোলা হলেও চট্টগ্রাম থেকে না তোলার চিন্তা আছে। অর্থাৎ সরাসরি কক্সবাজারের যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।
রেলসচিব মো. হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নতুন ট্রেনের নাম প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। তাড়াতাড়িই পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, প্রথমে একটি ট্রেন চলাচল করবে। পর্যায়ক্রমে ট্রেন বাড়ানো হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে আরও ট্রেন চালু করা হলে তখন পথে অন্যান্য স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী একটি নাম চূড়ান্ত করার পর বাকি যে নামগুলো থাকবে, সেগুলো অন্যান্য ট্রেনের নামকরণ করা হতে পারে।
প্রথম ট্রেনটি ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে রাত সাড়ে ১০টায়। কক্সবাজারে পৌঁছানোর কথা সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ এই ট্রেনটির রানিং টাইম বা চলাচলের সময় ধরা হয়েছে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে বেলা ১টায়। ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে রাত ৯টা ১০ মিনিটে।
রেলের পরিকল্পনা অনুসারে, বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেনটিতে ১৮টি কোচ থাকতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসব কোচ সদ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এসি কেবিন তিনটি, এসি চেয়ার পাঁচটি, শোভন চেয়ার ছয়টি, একটি প্রথম সিট কামরা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর বাইরে খাবার গাড়ি থাকবে দুটি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য একটি পাওয়ার কার থাকবে। সাধারণত আন্তনগর ট্রেনে একটি খাবার গাড়ি থাকে। রেলের প্রতিটি ট্রেনের নম্বর রয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনটি ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় এর নম্বর হবে ৮১৪ এবং আসার ট্রেনটি হবে ৮১৩ নম্বর।
সাধারণত রাতে যে সব আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে সেগুলোতে ঘুমানোর কামরা থাকে। তবে ঢাকা-কক্সবাজার পথের এই ট্রেনে শুরুতে ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকবে না। রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে এসি বার্থ কোচ পাওয়া যায়নি। পরে সংযোজন করা হবে।
ভাড়া নির্ধারণ
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে সব ট্রেনের জন্য এই পথের ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে আন্তনগর, মেইল, কমিউটার বিভিন্ন শ্রেণির ট্রেনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আন্তনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ৫০০ টাকা ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। আবার একই ভাড়ায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা যাবে। এই পথে এসি চেয়ারের ভাড়া পড়বে ৯৬১ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি যাত্রীকে ভাড়া দিতে হবে ১ হাজার ৭২৫ টাকা।
প্রথম যে ট্রেনটি চলাচল করবে, সেটি বিরতিহীন হওয়ায় এই ভাড়ার সঙ্গে ‘নন-স্টপ চার্জ’ হিসেবে আরও ১০ শতাংশ ভাড়া যুক্ত হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তুর্ণা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী/গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এসব আন্তনগর ট্রেন প্রায় শতভাগ আসন পূর্ণ করে চলাচল করে। রেল কর্তৃপক্ষ এ ট্রেনগুলোর চলাচল বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে, ঢাকা-কক্সবাজার পথে বিরতিহীনভাবে একটি ট্রেন চলাচল করলে মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আয় করবে রেলওয়ে।
রেলের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটন নগরীর পথে যাত্রী চাহিদা আছে বলে তাদের ধারণা। পর্যায়ক্রমে ট্রেন বাড়ানো হবে। আশা করা হচ্ছে এই পথ বেশ লাভজনক হবে। যাত্রীরাও ভালো সেবা পাবেন।