প্রত্যাশা পূরণে ভারতের বাড়তি কিছু করা দরকার

দিল্লিভিত্তিক ভারতের আন্তর্জাতিক নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থ। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজের কিংস ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে তাঁর গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য এশিয়ার নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, এশিয়ার প্রেক্ষাপট থেকে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।দিল্লিতে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ

  • বাংলাদেশকে ছাড়া ভারতের পক্ষে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো প্যাসিফিক) নীতি সম্ভব নয়।

  • নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পর এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলাটা সম্পর্কের শক্তিমত্তার প্রতিফলন।

  • আঞ্চলিক অংশীদারদের ছাড়া ভারতের পক্ষে সংযুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

  • দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা আরও বাড়তে থাকবে।

  • বাড়তি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশের কাছে নিজের উদারতা প্রমাণ দেওয়া সম্ভব।

হর্ষ ভি পন্থ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বেশ কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চল ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?

হর্ষ ভি পন্থ: দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে আমরা অর্থনৈতিক সংকট দেখছি। এ অঞ্চলের দেশগুলো একধরনের অশান্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। আর সামনের দিনগুলো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল ঘিরে এগোবে। ফলে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারতের পক্ষে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো–প্যাসিফিক) নীতি সম্ভব নয়। কারণ, বঙ্গোপসাগর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিকভাবে বঙ্গোপসাগরকে এখন অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে। তাই এর পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে ঢাকা–দিল্লি শক্তিশালী সম্পর্ক ছাড়া এটি সম্ভব নয়। কারণ, বঙ্গোপসাগর আপনি ঠিক রাখতে পারলেই ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে এগোতে পারবেন। বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে বিবেচনায় নিলে ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া অপরিহার্য।

প্রশ্ন :

আপনি বাংলাদেশ–ভারত শক্তিশালী সম্পর্ক অব্যাহত রাখার কথা বলছেন। কিন্তু এই সম্পর্ক নিয়ে তো নানা প্রশ্ন আছে।

হর্ষ ভি পন্থ: দেখুন, সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে স্থিতিশীল অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দিল্লিতে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভিন্নমত নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। ভূরাজনীতি ও ভূ–অর্থনীতিতে এখন নানা কিছু ঘটছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে নানা মেরুকরণও হচ্ছে। এমন সময়ে এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ। নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পর এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলাটা সম্পর্কের শক্তিমত্তার প্রতিফলন। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমলাতন্ত্রের কাছে তাঁদের বার্তা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পর্কের জন্য প্রয়োজনে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

কোভিড থেকে উত্তরণের ক্রান্তিলগ্নে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে গেল রাশিয়া। সারা বিশ্বের পাশাপাশি এ অঞ্চলেও যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। আপনার বিশ্লেষণ কী?

হর্ষ ভি পন্থ: কোভিডের আগে অনেক কিছুতে নিশ্চয়তা ছিল। চীনের বিকাশ হচ্ছিল। অনেক টাকাপয়সা দেশটির কাছ থেকে পাওয়া যেত। অবকাঠামো ও সংযুক্তিতে হাত বাড়িয়ে দিত চীন। কোভিড এসে অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবকিছুকে নাড়া দিয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে ‘ফার্মেসি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে ভারতের খ্যাতি থাকলে একসময় দেখা গেল, ওষুধ উৎপাদনে চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা ছিল অনেকখানি। এটা একধরনের বৈপরীত্য। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো কৌতূহলোদ্দীপক পর্ব অতিক্রম করছে। আগে আমরা বলতাম, এসো ব্যবসা করে বন্ধু বানাই। এখন বলছি এসো বন্ধুদের মধ্যে ব্যবসা করি। সমমনা বন্ধুদের মধ্যে বাণিজ্য করি। আপনি যদি আপনার অংশীদারের ওপর আস্থা না রাখেন তবে তো নিজের প্রযুক্তি তাকে দিতে চাইবেন না। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কাঠামোর ধরনটাই বদলে গেছে। নব্বইয়ের দশকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিকাশের পর্বে বলা হয়েছিল চীনকে বিকশিত হতে দাও। তার সঙ্গে বাণিজ্য করো। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে চীনের সঙ্গে অংশীদারত্বের পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। অর্থনীতির ভিত্তি যদি নড়বড়ে থাকে এবং ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকলে সমূহ ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা থাকে। ঋণের বোঝায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় ভেঙে পড়েছে। আগে যেটা তত্ত্ব ছিল, সেটা বাস্তবে ঘটেছে। অর্থনৈতিক সংকট থেকে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকট যে দেখা দিয়েছে, সেটা বলা বাহুল্য। সামগ্রিকভাবে বলা চলে, বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কোভিড–পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সংকটটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মানে হচ্ছে সংকট উত্তরণে নতুন রাজনৈতিক বোধোদয় প্রয়োজন। কোথাও কোথাও এটা শুরু হয়েছে। পাকিস্তানে ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমীকরণ কী দাঁড়াবে, নেপালের কমিউনিস্টরা কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের এগিয়ে নেবেন, সেটা সামনের দিনগুলোয় স্পষ্ট হবে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া যাক। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেছেন। পানি, সীমান্ত, বাণিজ্য, জ্বালানি, সংযুক্তি—এ বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিত থেকে এই সফরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হর্ষ ভি পন্থ: ভারতের জন্য প্রথমেই একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ উত্তর–পূর্বাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। এরপর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের যুক্ততা দরকার। এটা ভারতের কৌশলগত অগ্রাধিকার। তাই আঞ্চলিক সংযুক্তি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির প্রেক্ষাপট থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে এর সুবিধা নিতে পারে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে যুক্ত করে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি স্থাপন ভারতের পরবর্তী ধাপের অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক অংশীদারদের ছাড়া ভারতের পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এখানে ঐকমত্যের কোনো সমস্যা আমি দেখি না। সমস্যাটা হচ্ছে, এটি কীভাবে কার্যকর হবে। কতটা বাস্তবে হবে আর কতটা তত্ত্বে সীমিত থাকবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কী দেখতে চাই? সংযুক্তি ও অবকাঠামোর বিষয়গুলো ভবিষ্যতেও থাকবে। দুই দেশের আলোচনায় এবারও বিষয়গুলো এসেছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর এখন অনেক বেশি প্রতীকী হয়ে গেছে। দুই দেশের নেতাদের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে যোগাযোগ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগাযোগ এখন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফরকে আমি এখন বড় কোনো ঘোষণার নিরিখে দেখি না। যদিও প্রলোভন থাকে বড় কী ঘোষণা আসছে তা নিয়ে। অতীতে এ ধরনের বড় সফর পাঁচ বছরে একবার হতো। এখন তো এমন একটা জায়গা গেছে যেখানে স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। এবার শেখ হাসিনা ভারতে এলেন। তিনি চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। আমি আশা করব, বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজনে ভারত বাড়তি কিছু করবে।

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক সময়ে চীনকে নিয়ে ভারতের একধরনের অস্থিরতা চোখে পড়ে। বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের মাঝে চীনকে নিয়ে আসা হয়। ভারতের গণমাধ্যমে এ নিয়ে নিয়মিত বিরতিতে চর্চা হয়। আবার চীনও কোয়াড (মার্কিন নেতৃত্বাধীন চার দেশের কৌশলগত ফোরাম), আইপিএসে (ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক কৌশল) বাংলাদেশের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করে বসে। এ বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন?

হর্ষ ভি পন্থ: দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশলগত অবস্থানে চীনের উপস্থিতি থাকবেই। আমরা এটা পছন্দ করি কিংবা না করি সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। আমি মনে করি না, চীনের এই প্রভাব, উপস্থিতি শিগগিরই কাটবে। কারণ, চীনের অর্থনৈতিক শক্তি আছে। সঙ্গে আছে কূটনীতির জোর। আমরা আজকাল প্রায়ই চীনের আগ্রাসী মনোভাব লক্ষ করছি। তারা এটা সবার সঙ্গেই করছে। চীন দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঢুকে পড়ছে। একই সঙ্গে ভারতও তার নিজের মতো করে চীনকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও চীনের এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়তে থাকবে। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। কারণ, বিকাশমান দুটি দেশ সামনে এগিয়ে যেতে চলেছে। ভারত হয়তো চীনের মতো ততটা শক্তিশালী নয়। তবে চীনকে এই অঞ্চল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত সামর্থ্য ভারতের আছে। ভারত এই ধারা অব্যাহত রাখবে।

দেখার বিষয় হচ্ছে, এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর ভূমিকা কী। তারা কিন্তু বেশ চতুরতার সঙ্গে বেছে নিচ্ছে কোন অংশটা তাদের জন্য সহায়ক হবে। একটিকে অন্যটির বিরুদ্ধে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে, সেটি তারা বিবেচনায় রাখছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এখানে সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগে (বিআরআই) যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ধারণা করা হচ্ছে, ৯০–এর দশকে কূটনীতির কোমল যেসব সম্ভার চীনের হাতে ছিল, সেগুলো তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। ইদানীং তাদের আগ্রাসী আচরণ দেখা যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চীনে নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে। তবে ভারত ও চীনের এই প্রতিযোগিতা চলতে থাকবে। দুই দেশের এই প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

প্রশ্ন :

এমন লড়াইয়ের সময় ছোট দেশগুলো কি নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখবে?

হর্ষ ভি পন্থ: বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশ এমনকি ভারতও যদি বলে থাকে আমি চীনের সঙ্গে ব্যবসা করবো না, সেটা হবে স্রেফ পাগলামি। চীনের মতো দেশের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে আগামী দশকের মধ্যে ভারত কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হতে পারবে না। চীন শুধু ভারতের প্রতিবেশীই নয়, আঞ্চলিক শক্তিও বটে। আমি মনে করি, এখানে সমস্যাটা হচ্ছে সম্পর্কের রীতিনীতি কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে, তা নিয়ে। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা আমাদের সে শিক্ষাটাই দিয়েছে। সেখানে চীনের আধিপত্য থাকায় সবকিছু একপেশে ছিল। এর ফলে শ্রীলঙ্কা নিজেই তার জন্য সমস্যাটা তৈরি করে ফেলেছিল। ভারত কিন্তু বলছে না চীনের সঙ্গে ব্যবসা করবে না। ভারত বলছে, ব্যবসা হবে তবে ভারসাম্য আনতে হবে অসম বাণিজ্যে। এটা শুধু ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিআরআই বা অঞ্চল বা পথের উদ্যোগ নিয়ে ভারতের বিরোধিতা আদর্শিক নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, এতে যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা কতটা জুতসই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ ইন্ডিয়া অ্যান্ড গ্লোবাল গভর্ন্যান্স: আ রাইজিং পাওয়ার অ্যান্ড ইটস ডিসকনটেন্টস। বইয়ের সূত্র ধরে শেষ প্রশ্নটা করছি। প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশেষ করে রাজনৈতিক ও জনপরিসরে ভারতকে নিয়ে যে মনোভাব, তা কীভাবে দেখেন?

হর্ষ ভি পন্থ: অতীতের ঘটনাপ্রবাহের জন্য ভারতকে আংশিকভাবে দায়ী করা হয়। এর দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। অন্যটি হচ্ছে অধিকাংশ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ ভারত। তাই আপনি প্রায়ই দেখবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দলগুলো সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছে, আপনি ভারতের ‘প্রক্সি’, ভারতের হয়ে দেশ চালাচ্ছেন। জনপরিসরে এই ধারণাটা প্রোথিত। এখন ভারতের জন্য দোটনার বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কতটা, কীভাবে যুক্ত হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভারত নিজের জন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি করছে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। সম্পর্কের সরকারি স্তরের বাইরের পরিসরে একে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন হলে বাড়তি কিছু করাটা জরুরি। কারণ, বাড়তি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশের কাছে নিজের উদারতা প্রমাণ দেওয়া সম্ভব।