অনলাইনে রোগনির্ণয়: ‘ডা. গুগল’ থেকে সাবধান

তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের অনেকে নিজের কোনো রোগ হলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অনলাইনে রোগের উপসর্গ লিখে অনুসন্ধান করেন। গুগলের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গুগলের ফলাফল ভুল হয়ে থাকে। এতে ব্যক্তির জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বেসরকারি তরুণ চাকরিজীবী ইজাজ আহমেদের (ছদ্মনাম) কয়েক দিন ধরে পেটে ব্যথা। পেট ফাঁপা লাগছিল। সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য। তিনি উপসর্গগুলো গুগল করে রোগ বোঝার চেষ্টা করেন। গুগল বলে, এগুলো কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ। ইজাজ ভয় পান। তাঁর ঘুমসহ স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। পরে চিকিৎসকের কাছে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর আশঙ্কা সত্যি নয়।

গুগল হচ্ছে ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে দেখার জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। গুগলে অনুসন্ধানকে মৌখিক ভাষায় ‘গুগল করা’ বলে। ব্যক্তির রোগের উপসর্গ গুগলে অনুসন্ধানের বিপদ নিয়ে একটি জনপ্রিয় গান আছে। ‘নেভার গুগল ইয়োর সিম্পটমস’ শিরোনামের এই গানের শিল্পী সুইডিশ চিকিৎসক হেনরিক ওয়াইডগ্রেন। গানের কথা অনুযায়ী, মৃত্যুপথযাত্রী বাবা এক সন্ধ্যায় তাঁর সন্তানকে শেষবারের মতো উপদেশ দিচ্ছেন। তাঁর উপদেশ হলো, ‘কখনো তোমার রোগের লক্ষণগুলো গুগল কোরো না। কারণ, “কফ” ও “ডায়াগনোসিস” লিখে গুগল করলে বলবে “যক্ষ্মা” হয়েছে। বাঁ হাতে ব্যথা? গুগল বলবে, “হৃদ্‌রোগের শঙ্কা”।’

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। মানুষের এই চর্চা ‘ডা. গুগল’ নামে পরিচিত। চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ক্রমাগত অনলাইনে অনুসন্ধান চালানোর প্রবণতাকে (আসক্তি) ‘সাইবারকন্ড্রিয়া’ বলে। জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঙ্গার-এর চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী কারেন্ট সাইকিয়াট্রি রিপোর্টস-এ ২০২০ সালে সাইবারকন্ড্রিয়া নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ, ইন্টারনেট আসক্তি ও অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের (ওসিডি) উপসর্গের সঙ্গে সাইবারকন্ড্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা জার্মানিভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটিসটার ২০২৩ সালের জানুয়ারির হিসাব অনুসারে, বিশ্বে ৫১৬ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গুগল প্রতিদিন ১০০ কোটির বেশি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন পায়। এর অর্থ, গুগলে মিনিটে প্রায় ৭০ হাজার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত অনুসন্ধান (সার্চ) হয়। ২০১৯ সালের মার্চে গুগলের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কার্যক্রমের তৎকালীন প্রধান ডেভিড ফেইনবার্গের বরাতে দ্য টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগলে দৈনিক যে অনুসন্ধান, তার প্রায় ৭ শতাংশ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত।

সার্চ ইঞ্জিন গুগল আসে ১৯৯৮ সালে। গুগল ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানপ্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক বদল আনে। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটে স্বাস্থ্যগত তথ্য অনুসন্ধান প্রবণতার ওপর অনেক গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণা দেশ বা শহরভিত্তিক। যেমন ঢাকা বিভাগে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অন্তত ৫৮ শতাংশ স্বাস্থ্যগত নানা পরামর্শের জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করেন। তাঁরা সে অনুযায়ী ওষুধ খান।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২২ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে তাঁদের উপসর্গ গুগলে অনুসন্ধান করেন। আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৭২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেটে ঢুঁ মেরেছেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার আগের সপ্তাহে রোগীদের মধ্যে গুগলে স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধানের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, প্রায় ৪০ শতাংশ অস্ট্রেলীয় নিজের চিকিৎসার জন্য অনলাইনে স্বাস্থ্যগত তথ্য খোঁজ করেন। ২০১৭ সালের আরেক গবেষণার পটভূমিতে বলা হয়, বেলজিয়ামে রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শের আগেই ইন্টারনেটে নিজেদের স্বাস্থ্যগত তথ্য অনুসন্ধান করেন। ৪৫ দশমিক ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা সাধারণত অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধানের পর চিকিৎসকের কাছে যান।

আরও পড়ুন
গুগলকে অনেকে ‘সবজান্তা’ বলে। সে হিসেবে গুগল ব্যক্তির আস্থা অর্জন করতে পারে। কিন্তু যখন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে উপসর্গ অনুসন্ধান করে রোগনির্ণয়ের কথা আসে, তখন মনে রাখতে হবে ইন্টারনেট চিকিৎসক নয়। এখানে সত্যিকারের কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর সরাসরি যোগাযোগ হয় না। তা ছাড়া ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত, চিকিৎসাগত ইতিহাস গুগল জানে না। ব্যক্তি কী ধরনের চিকিৎসা নিচ্ছে, তা–ও গুগল জানে না। জানে না ব্যক্তির অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়, যা সঠিক রোগনির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কেন এবং কারা অনুসন্ধান করেন

২০১৯ সালের মার্চে গুগলের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কার্যক্রমের তৎকালীন প্রধান ডেভিড ফেইনবার্গের বরাতে দ্য টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি (ফেইনবার্গ) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিনে এক প্রযুক্তি সম্মেলনে বলেছিলেন, লোকজন নিজেদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ওষুধ বা চিকিৎসা, উপসর্গ প্রভৃতি বিষয়ে গুগলের কাছে প্রশ্ন করেন।

ঢাকা বিভাগে পরিচালিত ‘পজিটিভ পারসেপশন অব সেলফ মেডিকেশন প্র্যাকটিস অ্যান্ড সাইবারকন্ড্রিয়া বিহেভিয়ার অ্যামং অ্যাডাল্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৪৮০ জন অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই অবিবাহিত। গবেষণায় দেখা যায়, লোকজন উপসর্গ দেখে রোগনির্ণয় ও ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ পেতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। শিক্ষিতদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। আবার নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

বিএমসি পাবলিক হেলথ (২০১৫) সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, যাঁরা অসুস্থতা ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেন, তাঁরা মূলত তরুণ, নারী ও উচ্চশিক্ষিত।

আরও পড়ুন

গবেষণায় উঠে আসা ঝুঁকি

গবেষণাভিত্তিক সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশক অস্ট্রেলীয় ওয়েবসাইট দ্য কনভারসেশন ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্যবিজ্ঞান গবেষক তালিন লারা আশেকিনের একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। ‘ডা. গুগলের উত্থান: অনলাইনে নিজে রোগনির্ণয় ও উপসর্গ অনুসন্ধানের ঝুঁকি’ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সুবিধাজনক হওয়ায় কিছু মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাঁরা সরাসরি ‘ডা. গুগলের’ সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। অনলাইনে নিজে নিজে রোগনির্ণয় খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ানপোলের জরিপে (২০১৯) দেখা যায়, গুগলে উপসর্গ অনুসন্ধানের পর পাঁচজনের মধ্যে দুজন মার্কিন বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁদের একটি গুরুতর রোগ রয়েছে। তবে বাস্তবে তা ছিল না। জরিপে ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন, গুগল অনুসন্ধানের ফল তাঁদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মেডিকেল জার্নাল অব অস্ট্রেলিয়ায় (২০২০) প্রকাশিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাইটেকডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডা. গুগল প্রায়ই ভুল করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজি টুডে সাময়িকীতে (২০২০) ওয়েস্টার্ন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইরা ই. হাইম্যান জুনিয়র ‘ডা. গুগলের সঙ্গে পরামর্শের ঝুঁকি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়ে গুগলের ওপর নির্ভর করলে নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। তিনি তিনটি নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বিশেষভাবে বলেন।

প্রথমত, উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে তথ্য অনুসন্ধান করলে তা ব্যক্তিকে ভয়ংকর রোগ দেখাতে পারে। বিষয়টি ব্যক্তির মনে ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ বাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো একটি রোগ নিয়ে অনুসন্ধান করলে তার সম্ভাব্য উপসর্গের তালিকা চলে আসে। গুগলে এসব উপসর্গ দেখা ব্যক্তি ভাবতে পারেন, তাঁরও হয়তো এই রোগ হয়েছে। তৃতীয় নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি অপতথ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিজেজিপি ওপেন নামের অনলাইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে (২০১৭) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ (২৯.৮১%) উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে স্বাস্থ্যগত তথ্য অনুসন্ধানের পর তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কম বয়সী উত্তরদাতারা ইন্টারনেট অনুসন্ধানের পর বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন। আবার গুগল অনুসন্ধানের পর এক-দশমাংশের বেশি উত্তরদাতা (১২.৩৮%) অনুভব করেছিলেন, তাঁদের উপসর্গ আরও বাজে রূপ নিয়েছে।

যত সমস্যা হতে পারে

রোগের উপসর্গ গুগলে অনুসন্ধানের পর ব্যক্তি যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, তার চিত্র বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে। আবার গবেষক ও চিকিৎসকদের লেখা সচেতনতাধর্মী নিবন্ধেও এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। মোটা দাগে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা: গুগলে উপসর্গ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সব সময় স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে। যেমন মাথাব্যথার উপসর্গ অনুসন্ধানে মস্তিষ্কের টিউমারের ফলাফল আসতে পারে। এতে ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে পারে। এই উদ্বেগ ব্যক্তির মধ্যে স্নায়বিক রোগের জন্ম দিতে পারে। আবার মানসিক চাপের কারণে ব্যক্তির কিছু উপসর্গ আরও খারাপ হতে পারে।

ছোট সমস্যা, বড় সমস্যা: কেউ গুরুতর কোনো উপসর্গ নিয়ে অনুসন্ধান করলে তাকে ছোট সমস্যা হিসেবে দেখাতে পারে গুগল। এতে কেউ কেউ তাঁর স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে না–ও গুরুত্ব দিতে পারেন। তবে বাস্তবে হয়তো সমস্যাটি বেশ গুরুতর, যা পরে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। আবার গুগলের ফলাফল দেখে ব্যক্তি কখনো কখনো তাঁর সামান্য সমস্যাকে অনেক বড় বলে মনে করতে পারেন।

ভুল রোগ নির্ণয়: অনলাইনে উপসর্গ অনুসন্ধানে ভুল রোগনির্ণয়ের আশঙ্কা বেশি থাকে। ওয়েস্টার্ন জার্নাল অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে রোগীর গুগল অনুসন্ধানের ফল আর চিকিৎসক-ডায়াগনস্টিকের রোগনির্ণয়ের ফলের মধ্যে খুব কমই সংগতি থাকে।

ভুল ওষুধ গ্রহণ: অনলাইনে নিজে নিজে রোগ নির্ণয় করে ব্যক্তি ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন। এ অবস্থায় গুগলের পরামর্শে অনেকে ভুল ওষুধ গ্রহণ করেন। এতে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। বিবিসি ও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে এলোইস অ্যামি প্যারি (২১) নামের এক শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যু হয়। তিনি নিজে নিজে অনলাইন থেকে পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানোর আটটি ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। এই ট্যাবলেটে শিল্পে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক ছিল।

গুরুতর রোগের ঝুঁকি: সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, খিঁচুনি বা টিউমারের মতো গুরুতর রোগ গুগল শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে।

চিকিৎসা সহায়তায় বাধা: গুগলে রোগনির্ণয়ের অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে, এটি ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। গুগলে অনুসন্ধান করে সমস্যা গুরুতর নয় দেখা গেলে ব্যক্তি আর চিকিৎসকের কাছে না–ও যেতে পারেন। অথচ তাঁর হয়তো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার ছিল।

চিকিৎসককে অবিশ্বাস: রোগীর গুগলে উপসর্গ অনুসন্ধানের নেতিবাচক প্রভাব চিকিৎসককেও মোকাবিলা করতে হয়। অনেকে উপসর্গ গুগলে অনুসন্ধানের পর চিকিৎসকের কাছে যান। এ ধরনের রোগীকে সামাল দিতে চিকিৎসককে বেশ বেগ পেতে হয়। গুগলের ফলাফলের সঙ্গে চিকিৎসকের কথার মিল না হলে চিকিৎসককে অবিশ্বাস করতে পারেন রোগী। তখন রোগীর মনে হতে পারে, চিকিৎসক ভুল বলছেন।

বাড়তি খরচ: গুগলে অনুসন্ধান করে অনেকে গুরুতর কিছু দেখে চিকিৎসকের কাছে ছুটতে পারেন। নানা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারেন। পরে দেখা গেল, তেমন কিছুই হয়নি। আবার সমস্যা ছোট দেখে অনেকে রোগকে অবজ্ঞা করতে পারেন। পরে রোগ গুরুতর আকার ধারণ করলে এই অবহেলার খেসারত দিতে হয়। তখন চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হতে পারে।

গুগল চিকিৎসক নয়

গবেষক-চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগ জটিল বিষয়। গুগলে কিছু উপসর্গ লিখে রোগ নির্ণয় করা যায় না। রোগীর ইতিহাস, রোগের প্রেক্ষাপট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কারও পক্ষে উপসর্গের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

গুগলকে অনেকে ‘সবজান্তা’ বলে। সে হিসেবে গুগল ব্যক্তির আস্থা অর্জন করতে পারে। কিন্তু যখন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে উপসর্গ অনুসন্ধান করে রোগনির্ণয়ের কথা আসে, তখন মনে রাখতে হবে ইন্টারনেট চিকিৎসক নয়। এখানে সত্যিকারের কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর সরাসরি যোগাযোগ হয় না। তা ছাড়া ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত, চিকিৎসাগত ইতিহাস গুগল জানে না। ব্যক্তি কী ধরনের চিকিৎসা নিচ্ছে, তা–ও গুগল জানে না। জানে না ব্যক্তির অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়, যা সঠিক রোগনির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আবার কোনো সাধারণ ব্যক্তি বা রোগী কিন্তু চিকিৎসক নন। তাঁর চিকিৎসাসংক্রান্ত পড়ালেখা নেই। নেই প্রশিক্ষণ। তাই তাঁর পক্ষে গুগলের সহায়তা নিয়ে সঠিক রোগনির্ণয় অসম্ভব।