চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহে ব্যবসায় মন্দা, ব্যাংক লেনদেনে ধীরগতি

কুয়াশার কারণে সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা-দৌলাতদিয়া পয়েন্টে মাথাভাঙ্গা সেতুর ওপর
ছবি: প্রথম আলো

আবারও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা। মাঝে এক দিন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলেও গত দুই দিন ধরে নামতে শুরু করেছে। এ সময়ে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ বুধবার সকাল নয়টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, অস্থির এক আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রূপ বদল করছে তাপমাত্রা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাত নয়টায় তা ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি (প্রায় অর্ধেকে) সেলসিয়াসে নেমে যায়।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, ‘আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। আরেকটু নামলেই মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেবে। ১৬ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা আরও নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

এদিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্বাভাবিক চলাচলসহ জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লেনদেন অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেলা ১১টার আগে ক্রেতা ও গ্রাহকদের দেখা মিলছে না।

সরকারি ভিক্টোরিয়া জুবিলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই পালায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে সকালের শিফট শীতের কারণে সাড়ে সাতটা থেকে সোয়া আটটায় করা হয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও ওপরের শ্রেণিতে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরী জানান, ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন গলি, নতুন বাজার, ফেরিঘাট রোড ও আলি হোসেন সুপার মার্কেটসহ শহরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতের কারণে ব্যবসাবাণিজ্যে চরম মন্দাভাব চলছে। ফেরিঘাট রোডে মুদি পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকার ওহিদ স্টোরের মালিক ওহিদ চিশতী বলেন, ‘শীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য লুজার। বাজারে মানুষ তেমন আসছেও না, কিনাবেচাও হচ্চে না।’ বড়বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বেচাকিনা নেই বুললিই চলে। অ্যারাম অবস্থা চললি ব্যবসায়ীকদের পতে বসতি হবে।’

আরও পড়ুন

ব্যবসাবাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক খাতেও চরম মন্দাভাব চলছে। শীতের কারণে ব্যাংকগুলোতে কমেছে লেনদেন। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা শাখার প্রধান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বশির আহম্মেদ জানান, ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন কমে গেছে। দিনের প্রথমার্ধে ব্যাংক প্রায় ফাঁকা থাকছে। বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলনসহ সরকারের বিভিন্ন খাতে লেনদেনকারীরা আসছেন। তবে, দেরিতে। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক জগলুল পাশা বলেন, শৈত্য প্রবাহ শুরু হওয়ার পর গ্রাহকদের উপস্থিতি ও লেনদেন ২০ শতাংশ কমে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ পথে চলাচলকারী বাসগুলোতে যাত্রী চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ বাজার পর্যন্ত চলাচলকারী বাসগুলো একবার আসা-যাওয়া করলে খরচ ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু, শীতের কারণে সকাল থেকে বেলা ৮টা পর্যন্ত চলাচলকারী বাসগুলোর আয় প্রতি ট্রিপে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। পরিবহন মালিকেরা জেনেশুনেই প্রতিদিন লোকসান গুনছেন।

ঢাকাসহ দূরপাল্লার পথে চলাচলকারী রয়েল এক্সপ্রেসের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন মল্লিক বলেন, যদিও ঢাকায় যাওয়ার পথে কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, ঢাকা থেকে ফেরার পথে দুই থেকে পাঁচজনের বেশি যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি উদ্যোগে এ পর্যন্ত ২১ হাজারেরও বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বেসরকারিভাবে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। আরও কম্বল চেয়ে ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।