সুফিয়া কামালের আদর্শ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ

মা সুফিয়া কামালকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে বেগম সুফিয়া কামালের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্বচ্ছ। তিনি চাইতেন নেতৃত্ব তৈরি হোক সামগ্রিকভাবে। আইয়ুব খানের মুখের ওপরও প্রতিবাদ করার সাহস ছিল তাঁর। তাই ‘জননী সাহসিকা’ সুফিয়া কামালের আদর্শ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

নারীমুক্তি, গণতন্ত্র, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা কবি সুফিয়া কামালের ২৬তম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে সবার স্মৃতিকথায় উঠে এল এসব কথা। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এবং সাঁঝের মায়া ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় এই স্মরণসভার। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সুফিয়া কামালের বাড়ি সাঁঝের মায়ায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ছিল গান, কবিতা ও নাচ।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে সুফিয়া কামালের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্বচ্ছ। আশির দিকে নারায়ণগঞ্জে কান্দুপট্টি উচ্ছেদের সময় কেউ কথা বলেনি, তখন সুফিয়া কামাল নিজে গিয়ে উদ্ধার করেছিলেন অনেককে। সুফিয়া কামালের জীবনব্যাপী যে সাহস, এর তুলনা হয় না। তাঁকে উপলব্ধি করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন ফওজিয়া মোসলেম।

এই সাঁঝের মায়া বাড়িতে সুফিয়া কামালকে নানারূপে অনেক মায়ায় দেখার স্মৃতিচারণা করেন মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্ত। তিনি বলেন, ‘সুফিয়া কামাল শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিকেও ধারণ করতেন।’ সুফিয়া কামাল কেন অক্ষরে অক্ষরে জননী সাহসিকা, সেই ইতিহাস উল্লেখ করতে গিয়ে আইয়ুব খানের মুখের ওপর তাঁর (সুফিয়া কামাল) জবাব দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরেন আরমা।

‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে সুফিয়া কামালের সব লেখা গভীরভাবে পাঠ করা দরকার। সেসব লেখা অনুভব করা প্রয়োজন।

সুফিয়া কামালের ২৬তম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে আয়োজক ও অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

এত আন্দোলন করেছে যে জাতি, সে জাতির জন্য সুফিয়া কামালের আদর্শ সব সময় ভীষণভাবে প্রয়োজন উল্লেখ করেন খুশী কবির বলেন, ‘আমরা তাঁকে ধারণ করতে চাই। তিনি উপস্থিত নেই, কিন্তু তাঁর প্রতিটি কথা চিন্তা সবকিছু আমাদের দিকনির্দেশনা দেয়।’

সুফিয়া কামালের মেয়ে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, সম্মিলিত শক্তিতে বিশ্বাসী সুফিয়া কামাল চাইতেন সংগঠন করতে। সংগঠিত হয়ে কাজ করার ধরন ছিল তাঁর।

মায়ের শৈশব এবং নিজেদের শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, সুফিয়া কামাল সাধারণ কাজগুলোকেও অসাধারণ করে তুলতেন। কাপড় ধুতে গিয়েও গল্প বলতেন; এতে সময়টা সন্তানদের কাছে হয়ে যেত অপেক্ষার সময়। এত কাজ বা হায় হায় সময় পেলাম না—এমন কথা কখনো বলেননি। রান্না থেকে সব কাজ নিজে করতে চাইতেন তিনি। মিটিং, মিছিল, কবিতা লেখার মধ্যেও সুফিয়া কামাল বাড়ির কোনো নিয়মের ব্যত্যয় হতে দিতেন না।

আরও পড়ুন

সুলতানা কামাল মায়ের প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণ মানুষ কেমন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হতেন। এই যে তাঁর সঞ্চারণ, এটা এক অসাধারণ দিক। তিনি যখন পরিবারকে সময় দিতেন, তখন যেমন সাধারণ থাকতেন, পরমুহূর্তেই যখন মঞ্চে উঠতেন, তখন হয়ে যেতেন অসাধারণ।

অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন তাহসিনা রুমা। স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্নেহধন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বরেণ্য শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুসহ আরও অনেকে।

সুফিয়া কামাল ছিলেন একাধারে কবি, নারী আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী এবং ধর্মান্ধতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সুফিয়া কামাল সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯১১ সালে বরিশালের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন