গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে, প্রস্তুতি নিতে হবে

অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং রাশিয়ার মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট জোন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে পরিবেশবিষয়ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক—বেন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০০ সালে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদ-নদী এবং বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ। সাক্ষাৎকারের দুই পর্বের শেষ কিস্তি আজ।

নজরুল ইসলাম

প্রশ্ন :

ফেনী নদী এবং সিলেটের কুশিয়ারা নদী নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত।

নজরুল ইসলাম: ফেনী নদীর বিষয়ে ভারতের সেচ ও গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি অপসারণের দাবি ছিল। বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়েছে। ২০১৯ সালে ৫ অক্টোবর দিল্লিতে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। অভিযোগ রয়েছে যে ভারত বাস্তবে ৩৬টি পাম্প দিয়ে ৭২ কিউসেক পানি অপসারণ করছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমের ১২০ কিউসেক প্রবাহ এখন বাংলাদেশে ৪৮ কিউসেকে হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ কুশিয়ারা নদীসংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এখানে বিষয়টা হচ্ছে যে বাংলাদেশ তার সীমান্তের অভ্যন্তরে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খালে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। সে উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পাম্প-হাউস ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ভারত এতে আপত্তি তুলে এই যুক্তিতে যে, এসব স্থাপনা সীমান্তের অত্যন্ত নিকটবর্তী। ২০২২ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারত তার আপত্তি প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে বাংলাদেশকে তার সীমান্তের ভেতর একটা নদী থেকে সামান্য পরিমাণের পানি অন্য খালে প্রবাহিত করার জন্য ভারতের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হলো, যদিও এর মাধ্যমে ভারতের পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ার সুযোগ ছিল না। অথচ ভারত বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষা না করে পানি অপসারণের জন্য বড় বড় ব্যারেজ এবং খাল নির্মাণ করে যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের নদ-নদী, ভূপ্রকৃতি এবং অর্থনীতির ওপর অপরিমেয় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সুতরাং বলা যেতে পারে যে নদ-নদীবিষয়ক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অসম পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কুশিয়ারা চুক্তি তারই সাক্ষ্য দেয়।

আরও পড়ুন
২০২৬ সালে শেষ হবে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি। অথচ মোটেও বৃদ্ধি পায়নি গঙ্গার প্রবাহ। ছবিটি সম্প্রতি রাজশাহী নগরের হাইটেক পার্ক এলাকার পদ্মাপার থেকে তোলা
শহীদুল ইসলাম

প্রশ্ন :

দেশে তো নদী খননের মাধ্যমে সচল রাখার কথা বলা হচ্ছে। তিস্তার বাংলাদেশ অংশেও প্রচুর পলি পড়েছে। নদীকে নাব্য রাখার উপায় কি শুধুই খনন? নাকি অন্য কোনো উপায় আছে।

নজরুল ইসলাম: নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে খননেরও প্রয়োজন হতে পারে। তবে তা দেশের নদ-নদীর পুনরুজ্জীবনের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে খনন করা হলে তা সফল হয় না। ইতিমধ্যে বহু অসফল খননের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। খননকৃত মাটি কোথায় ফেলা হবে, সেটা একটা সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। অনেক সময় তা নদীতীরে ফেলা হয় এবং বৃষ্টির পানিতে তা দ্রুতই আবার নদীতে জমা হয়। কাজেই নদ-নদী খননকে বাংলাদেশের গ্রামের বসতবাড়ির ভিটা এবং কৃষিজমির উচ্চতা বৃদ্ধির একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে। সে জন্য গ্রামে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

তার চেয়ে বড় কথা, নাব্যতা রক্ষার জন্য খনন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। নদ-নদীকে নাব্যতা রাখার মূল উপায় হলো এগুলোর প্রবাহ বজায় রাখা। সে জন্য ভারতের সঙ্গে ‘নদীর বিনিময়ে ট্রানজিট’ ফর্মুলার ভিত্তিতে আলোচনা হতে হবে। লক্ষণীয়, নদ-নদীবাহিত পলি বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে সঠিকভাবে বিস্তৃত হলে সেখানে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূল ডুবে যাওয়ার যে বিপদ দেখা দিয়েছে, তা প্রশমিত হবে। অন্যথায়, বাংলাদেশের উপকূলের বিরাট অংশ নিমজ্জিত হবে এবং কয়েক কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। তার কিছু প্রতিক্রিয়া ভারতের ওপর পড়া বিচিত্র হবে না। সুতরাং নদ-নদীগুলোর পূর্ণ প্রবাহ নিশ্চিত করে পলিবালুকে সমুদ্র উপকূলে পৌঁছানোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই স্বার্থ রয়েছে। এটা করা গেলে নদ-নদীর নাব্যতাও রক্ষা পাবে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৭টি অভিন্ন নদী নিয়ে একসঙ্গে কোনো সমাধানের উপায় আছে?

নজরুল ইসলাম: অভিন্ন নদ-নদীর প্রতিটিই স্বকীয় এবং তাতে ভারতের হস্তক্ষেপের মাত্রা ও চরিত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং প্রতিটি নদ-নদীর সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে সমাধান খুঁজতে হবে। ফলে সব নদী নিয়ে একসঙ্গে সমস্যার সমাধান করে ফেলা যাবে, এমনটা ভাবার প্রয়োজন নেই। বর্তমানে নদ-নদী নিয়ে যে বিবাদ-বিসংবাদ, তার মূল কারণ হলো নদ-নদীকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখা ও তার ব্যবহার। এই পন্থা অনুযায়ী নদ-নদীকে শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ বলে ভাবা হয় এবং সে জন্য মনে করা হয় যে, ‘নদীর পানি সমুদ্রে চলে যাওয়া একটা অপচয়’। সে জন্যই এত সব বাঁধ, ব্যারেজ, জলাধার ইত্যাদি নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে নদীর পানি সমুদ্রে চলে যাওয়ার আগেই ব্যবহার করে ফেলা যায়। কিন্তু নদীর পানির পরিমাণ সীমাবদ্ধ। কাজেই একটি দেশ বেশি পানি ব্যবহার করে ফেললে অন্য দেশের জন্য পানি কমে যায়। এর ফলেই শুরু হয় বিবাদ ও সংঘাত। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো নদী শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়। নদ-নদী পৃথিবীর পানিচক্রের অন্যতম সংযোগ এবং নিজ নিজ অববাহিকার স্বকীয় বাস্তুতন্ত্রের সৃষ্টিকারী। কাজেই নদ-নদীর সব পানি শুঁষে ফেললে একসময় ধরিত্রীর ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হবে। ইতিমধ্যে তা হয়েছে। সে জন্য যেটা প্রয়োজন, তা হলো নদ-নদীর প্রতি ‘প্রকৃতিসম্মত পন্থা’ অবলম্বন করা। তাহলে সব দেশ নদ-নদীর ওপর কম হস্তক্ষেপ করবে। নদ-নদী রক্ষা পাবে। নদ-নদী নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদ কম হবে। সংঘাতের উৎসের পরিবর্তে নদ-নদী প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং ভারত ও বাংলাদেশ কর্তৃক নদ-নদীর প্রতি বর্তমানের বাণিজ্যিক পন্থা পরিত্যাগ করে প্রকৃতিসম্মত পন্থা গ্রহণ করলে একসঙ্গে ৫৭টি অভিন্ন নদ-নদী বিষয়ে সমস্যা সমাধানের পথ উন্মোচিত হবে।

প্রশ্ন :

গঙ্গা চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। এখন থেকে বাংলাদেশ কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারে। ওই চুক্তির নবায়নের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত?

নজরুল ইসলাম: ঠিকই বলেছেন, ১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অনেক কিছু করার আছে। এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথমেই লক্ষ করতে হবে যে এই চুক্তির কারণে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ মোটেও বৃদ্ধি পায়নি। ১৯৭৭ সালের সমঝোতা স্মারকের তুলনায় ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে বাংলাদেশে গঙ্গার ‘ন্যূনতম প্রবাহ’ সম্পর্কে কোনো ‘নিশ্চয়তা ধারা (গ্যারান্টি ক্লজ)’ ছিল না। বলা হয়েছিল যে শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কাতে যতটুকু প্রবাহ থাকবে, তার অর্ধেক বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। কিন্তু ভারত তিস্তার মতো গঙ্গার উজান ও তার বিভিন্ন উপনদীর ওপর বহু বাঁধ এবং ব্যারাজ নির্মাণ করেছে, যার ফলে ফারাক্কাতে গঙ্গার প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে এবং নিশ্চয়তা ধারা না থাকায় বাংলাদেশে গঙ্গাপ্রবাহ হ্রাস পেয়েছে।

প্রশ্ন :

ফারাক্কা বাঁধেরও ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে।

নজরুল ইসলাম: ১৯৭৫ সালে চালু হওয়া ফারাক্কা বাঁধেরও ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, ৩০ বছর হলেই এ ধরনের বাঁধের মূল্যায়ন হওয়ার কথা। কাজেই ফারাক্কা বাঁধের একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। ২০১৭ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে বিহারের রাজধানী পাটনায় গঙ্গা নদীর ওপর যে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে সাউথ এশিয়ান নেওয়ার্ক ফর রিভার্স অ্যান্ড পিপলের কর্ণধার, ভারতের বিশিষ্ট নদী গবেষক, হিমাংশু থাক্কার এ বিষয়টি লক্ষ করেছিলেন এবং ফারাক্কার মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছিলেন। বস্তুত ভারতে এখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের নেতৃত্বে ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবিতে একটি জোরালো আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এর কারণ হলো, এই বাঁধের ফলে প্রায় ৩০ কোটি টন পলিবালু ফারাক্কার উজানে গঙ্গায় জমা হচ্ছে; ফলে নদীতল উঁচু হচ্ছে; এবং বন্যা ও পাড় ভাঙনের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ ফারাক্কা বাঁধ এখন ভারতের জন্যই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকমটা যে হবে, অনেকে আগেই তার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রকৌশলী কপিল ভট্টাচার্য। তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন যে, কলকাতা বন্দরের নাব্যতার সমস্যার মূল কারণ হলো দামোদর উপত্যকা প্রকল্পের অধীনে নির্মিত বিভিন্ন বাঁধ। ফলে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানি ভাগীরথী দিয়ে প্রবাহিত করলেও কলকাতা বন্দর তার নাব্যতা ফেরত পাবে না। এই ভিন্নমত প্রকাশের জন্য কপিল ভট্টাচার্য তিরস্কৃত এবং চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। ইতিহাসে আজ কপিল ভট্টাচার্যের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। ফারাক্কা কলকাতা বন্দরকে নাব্যতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে; বিপরীতে বিহারের জনগণের জন্য দুর্দশা সৃষ্টি করেছে; আর বাংলাদেশের নদ-নদী বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিমের নদ-নদী ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে। সুতরাং বাংলাদেশের যেটা করণীয় তা হলো, ১৯৯৬ সালের চুক্তির মতো আরেকটি চুক্তির ফাঁদে আটকা না পড়ে ফারাক্কা বাঁধ অপসারণের যে দাবি ভারতে উঠেছে, তার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা এবং গঙ্গা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করায় সচেষ্ট হওয়া। সে জন্য ‘নদীর বিনিময়ে ট্রানজিট’ ফর্মুলা সাহসের সঙ্গে তুলে ধরা দরকার। আরও প্রয়োজন অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নদ-নদীবিষয়ক জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের সনদ স্বাক্ষর করা এবং অংশীদারি দেশ হিসেবে এই সনদ বাংলাদেশকে যেসব অধিকার প্রদান করে, সেগুলো আদায়ে সচেষ্ট হওয়া।

প্রশ্ন :

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নজরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।