চুক্তিতে কারাবাসকারী মজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা, আইনজীবীকে শোকজ
টাকার বিনিময়ে আরেকজনের হয়ে চুক্তিতে কারাভোগকারী ফুটপাতের সেই চা বিক্রেতা মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলমের আদালতে মামলাটি হয়। তৃতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
একই সঙ্গে নাছির সেজে আসা মজিবুরের হয়ে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী তৌহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। আজ দুপুরে তৃতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আঞ্জুমান আরা বেগম এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার প্রথম আলোয় ‘আসামি অন্যজন, চুক্তিতে কারাবাসে চা বিক্রেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তৃতীয় যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নাছরিন আক্তার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় মজিবুরের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে মামলা হয়েছে। তিনি যেহেতু চেক প্রত্যাখ্যানের মামলার আসামি নন, তাই তাঁকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। নতুন হওয়া প্রতারণা মামলায় তাঁকে আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়। পাশাপাশি প্রকৃত আসামি নাছির আহমদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সাজা থেকে নিজেকে বাঁচাতে নাছির তাঁর পরিবর্তে চা বিক্রেতা মজিবুর রহমানের সঙ্গে চুক্তি করেন। চলতি মাসের ১৩ মার্চ মজিবুর নাছির সেজে তৃতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সরকারি কৌঁসুলি নাছরিন আরও বলেন, আজ দুপুরে মজিবুরকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেন। মজিবুর আদালতকে বলেন, ‘আমি এই মামলার আসামি ছিলাম না। আমি প্রকৃত আসামি নাছির আহমদের পক্ষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছি স্বেচ্ছায়। প্রকৃত আসামির কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে এটি করেছি। আসামি নাছিরের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিই। তিনি আমার দোকানে চা খেতেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয়।’
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মীর আহমেদ নামের এক ব্যক্তি নাছির আহমেদের বিরুদ্ধে ২০ হাজার টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই আদালত নাছিরকে ২ মাসের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে নাছির এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালত দুই মাসের পরিবর্তে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু জামিনে গিয়ে পলাতক হয়ে যাওয়ায় আদালত আসামি নাছিরের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন।
এই সাজা থেকে নিজেকে বাঁচাতে নাছির তাঁর পরিবর্তে চা বিক্রেতা মজিবুর রহমানের সঙ্গে চুক্তি করেন। চলতি মাসের ১৩ মার্চ মজিবুর নাছির সেজে তৃতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। নাছির সেজে আসা মজিবুরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। কারাগারে আসা আসামিদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। ১৬ মার্চ জানা যায়, এই আঙুলের ছাপ নাছিরের নয়, মজিবুরের। এরপর বিষয়টি আদালতের নজরে আনে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে বেরিয়ে আসে চুক্তিতে আরেকজনের হয়ে কারাবাসে আসার বিষয়টি।
আদালত সূত্র জানায়, আসামি নাছির চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা হলেও থাকতেন নগরের বহদ্দারহাট এলাকায়। এর পাশের এলাকা চান্দগাঁওয়ে ফুটপাতে বসে চা বিক্রি করেন মজিবুর। সেখানেই তাঁদের পরিচয়।