‘স্থাপত্যকে শহরকেন্দ্রিক করতে চাননি মাজহারুল ইসলাম’

প্রয়াত স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশের স্থাপত্যবিদ্যার শক্ত ভিতটি তৈরি হয়েছে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের হাত ধরে। রাজনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে স্থাপত্যবিদ্যার সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। ভূমির সঙ্গে সংযোগ আর আকাশ স্পর্শ করার প্রেরণা ছিল তাঁর প্রতিটি কাজে। তিনি স্থাপত্যকে কখনো শুধু শহরকেন্দ্রিক দর্শনীয় বস্তুতে রূপান্তর করতে চাননি।

বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশাচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ প্রয়াত স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে এসব কথা। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনটি পর্বে স্থাপত্য, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার ও ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টের মহাপরিচালক স্থপতি কাজী খালিদ আশরাফ। তিনি পশ্চিম বাংলার বরেণ্য স্থপতি অধ্যাপক সন্তোষ ঘোষের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘মাজহারুল ইসলাম বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্থপতি।’

‘স্থাপত্যমণ্ডল একজন স্থপতির বিবর্তন’ পর্বের আলোচনায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, মাজহারুল ইসলাম স্থাপত্যবিদ্যায় একটি ভাষা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আধুনিক স্থাপত্যকে নিজের দেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতিকে মাথায় রেখে এনেছেন তিনি।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, মাজহারুল ইসলাম একই সঙ্গে অনেক বিষয়ে বিচরণ করতে পারতেন। তিনি স্থাপত্যকে কখনো শুধু শহরকেন্দ্রিক দর্শনীয় বস্তুতে রূপান্তর করতে চাননি।

এ পর্বের সঞ্চালনার সময় স্থপতি এহসান খান বলেন, মাজহারুল ইসলাম অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সম্পর্ক তৈরি করেছেন। স্থাপত্য দিয়ে সংযোগ তৈরি করেছেন ভূমি থেকে আকাশের সঙ্গে।

স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

‘রাজনৈতিক মণ্ডল স্থাপত্য ও রাজনীতি প্রসঙ্গে পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক দ্বিতীয় পর্বটি সঞ্চালনা করেন কাজী খালিদ আশরাফ।

গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, মাজহারুল ইসলাম আসলে স্থাপত্য, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি তিনটি মণ্ডলেরই। ছায়ানট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর অনেক বড় ভূমিকা। তিনি বলেন, মাজহারুল ইসলাম ছিলেন ওই সময়ে বাম ধারার একজন পৃষ্ঠপোষক। ষাটের দশকে তরুণেরা প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তা উঠে এসেছিল তাঁর কাজে।

এই পর্বে পারিবারিক সম্পর্কের স্মৃতিকথা উঠে আসে অধ্যাপক নিয়াজ জামানের বক্তব্যে। বিদেশ থেকে গ্রহণ–বর্জন এবং দেশের স্থাপত্যবিদ্যা সম্পর্কে মাজহারুল ইসলামের ব্যক্তিত্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব কতখানি ছিল, সে উদাহরণ দেন তিনি।

স্থপতি নুরুর রহমান খান রাজনীতির সঙ্গে স্থাপত্যের যোগসূত্র তৈরির পেছনে মাজহারুল ইসলামের দর্শন নিয়ে কথা বলেন।

‘সাংস্কৃতিক মণ্ডল চেতনা আন্দোলন’ শীর্ষক তৃতীয় ও শেষ পর্বের সঞ্চালনার সময় স্থপতি সাইফ উল হক বলেন, সমাজের অন্য সবকিছুর সঙ্গেই স্থাপত্য জড়িত। সে ভাবনাটি তৈরি করে দিয়েছেন স্থপতি মাজহারুল ইসলাম।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের বক্তব্যে উঠে আসে সত্তরের দশকে তাঁর চাচা বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের সূত্রে মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে ধানমন্ডিতে প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতি।

মুনতাসীর মামুন বলেন, পঞ্চাশের দশকে দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য জগতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা। এরই ধারাবাহিকতায় মাজহারুল ইসলাম  স্থাপত্যবিদ্যাকে সর্বজনীনভাবে উপস্থাপন করার প্রেরণা পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া বিভিন্ন পর্বে আরও আলোচনা করেছেন স্থপতি খন্দকার হাসিবুল কবির, স্থপতি উত্তম কুমার সাহা ও স্থপতি জালাল আহমেদ।

আরও পড়ুন