গ্রামীণ টেলিকম: শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলায় আইনজীবীর ফি ১৬ কোটি টাকা

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের আইনজীবীর ফি হিসেবে ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের অন্যতম মূল আইনজীবী ইউসুফ আলীর আইনজীবী হিসেবে এ তথ্য তুলে ধরেন।

শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আইনজীবীর ফি এবং কোন খাতে কত খরচ, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করতে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

এর আগে গত ৩০ জুন হাইকোর্ট শ্রমিকদের পাওনা দাবি নিয়ে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি এবং পাওনা পরিশোধের বিবরণী হলফনামা আকারে দুই পক্ষের আইনজীবীকে ২ আগস্ট দাখিল করতে বলেন। সেদিন আদালত বলেন, ‘একটি নিউজ পোর্টালে এসেছে, আবেদনকারীদের (শ্রমিকদের) আইনজীবীর ফান্ডে ১২ কোটি টাকা গেছে। উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী হয়নি যে ফিস ১২ কোটি টাকা হবে। স্বচ্ছতার খাতিরে আদালত ও আইনজীবীর শুদ্ধতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য সমঝোতা চুক্তি ও পাওনা পরিশোধের বিবরণী হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হলো।’

এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে। শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী। ইউসুফ আলীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম, মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও রবিউল আলম। গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান।

ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে গ্রামীণ টেলিকম এবং শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন পৃথক হলফনামা দাখিল করে। শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় ৬ পার্সেন্ট হারে অর্থ দিয়েছেন। এই ৬ পার্সেন্ট অর্থ আইনজীবী ফি ও অন্যান্য খরচ হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।’ আদালত বলেন, ‘শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে ঢুকবে, ট্রেড ইউনিয়ন আসে কীভাবে?’ তখন আহসানুল করিম বলেন, ‘শ্রমিক-ট্রেড ইউনিয়ন আলোচনার মাধ্যমে ওই সিদ্ধান্ত নেয়।’

আদালত বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলেননি, আইনজীবী কত টাকা ফি নিয়েছেন। এ নিয়ে লুকোচুরির কী আছে?’ এ সময় আহসানুল করিম বলেন, ‘আইনজীবীর ফি হিসেবে ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। ৬ পার্সেন্ট হারে মোট ২৬ কোটি টাকার মধ্যে বাকি ১০ কোটি টাকা ট্রেড ইউনিয়নের কাছে জমা রয়েছে।’

আরও পড়ুন

আদালত বলেন, ‘অন্যান্য খরচ কী, তা–ও স্পষ্টভাবে বলা নেই। এটা সিম্পল বিষয়। আপনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে এত টাকা ফিস নিয়েছেন। আইনজীবীর ফি এত (১৬ কোটি টাকা) হলে ভালো। বাকিটা দুদক নাকি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে, তা তাদের ব্যাপার। তবে আদালত সম্পর্কে যাতে জনমনে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক না হয়, সে জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।’

শুনানির এই পর্যায়ে ওই সব তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে সম্পূরক হলফনামা দাখিল করার জন্য সময়ের আরজি জানান আইনজীবীরা। পরে আদালত দুই দিন সময় দেন।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, লভ্যাংশের বকেয়া পাওনাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে গত বছর হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এর শুনানি নিয়ে আদালত কারণ দর্শাতে নোটিশ দেন।

আরও পড়ুন

গত ৪ এপ্রিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পরে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে পাওয়া পরিশোধ নিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে জানিয়ে আদালতে মামলা না চালানোর কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে না চালানোর দিক বিবেচনায় মামলা (অবসায়ন আবেদন) খারিজ হয়। এরপর ৩০ জুন ‘গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন বনাম গ্রামীণ টেলিকম এবং অন্যান্য’ শিরোনামে মামলাটি কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত সমঝোতা চুক্তি ও পাওনা পরিশোধের বিবরণী হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেন।

এর আগে গত ২৩ মে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছিলেন, লভ্যাংশের অর্থ প্রদানের দাবি নিয়ে সমঝোতার পর গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করা ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সর্বমোট পাওনা টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৪৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬৮ জনের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। চারজন মারা গেছেন ও চারজন বিদেশে থাকার কারণে তাঁদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে।