কর্ণফুলী টানেল: সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে দুই টিউববিশিষ্ট বহু লেনের কর্ণফুলী টানেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের এ টানেল সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশে ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। আর চীন সরকারে এ টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করেন চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে।

করোনা অতিমারি এবং জমি অধিগ্রহণের বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে কাজ চলছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে স্বপ্নের টানেলের নির্মাণকাজ। এ বিষয় কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের যদি কাজে অন্য কোনো ডিজাস্টার না হয়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। সে লক্ষ্যেই কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনার সময় আমরা শুধু সীমিত আকারে কাজ চালাতে পেরেছিলাম। টানেলের কাজে অনেক মালামাল, মেশিনারিজ আমদানি করতে হয়। কোভিডের কারণে দেশে গত বছরের মার্চ মাস লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অফিস–আদালতের সঙ্গে কাস্টমস থেকে শুরু করে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কাজের একটা সমস্যা তৈরি হয়। টানেলে যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল, তারা করোনার কারণে বাড়ি চলে যায়। শুধু একজিবিশনের কাজ আমরা চালু রাখতে পেরেছিলাম। এ ছাড়া অন্য কিছু কাজ আমরা সীমিত আকারে চালু রাখতে পেরেছিলাম।’

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক, যা ২ শতাংশ সুদহারে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলে থাকছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব, যাদের প্রতিটি দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

টানেলটির পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হওয়ার টিউবটির খননকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের আগস্টে। শেষ হয়েছে ৭৮৮ মিটার রাস্তার নির্মাণকাজ। প্রতি টিউবের দুটি করে মোট চার লেনের সড়ক নির্মিত হবে টানেলের ভেতরে। অন্যদিকে, আনোয়ার প্রান্ত থেকে শুরু হওয়ার দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ চলছে। এ টিউবের ১ হাজার ৬১০ মিটারের খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তের ফ্যাট গেটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। টানেলের সঙ্গে সংযোগকারী দুটো রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান। আর আনোয়ারা প্রান্তের ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজের নির্মাণকাজও এগিয়েছে অনেকটা। স্থাপন করা হয়েছে স্প্যান ও গার্ডার।

হাইডেলবার্গসিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) সায়েফ নাসির বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কর্ণফুলী টানেল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। এ প্রকল্পের ব্যবহারিক সিমেন্টের ৭৫ শতাংশই রুবি সিমেন্ট, যা হাইডেলবার্গসিমেন্টের চট্টগ্রামের কারখানায় উৎপাদিত। হাইডেলবার্গসিমেন্ট বাংলাদেশের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

বর্তমানে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৫শতাংশ। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৮২ দশমিক শূন্য ৮ একর জমির মধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৬২ দশমিক ৩২ একর। বাকি জমি দ্রুত অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। টানেল চালুর প্রথম বছরেই প্রায় ৫০ লাখ গাড়ি যাতায়াত করবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী টানেল চালু হলে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রামের দুই অংশের মানুষের। বাড়বে জিডিপির পরিমাণ। ফলে চীনের সাংসাইয়ের আদলে চট্টগ্রামও হয়ে উঠবে ওয়ান সিটি টু টাউন।