ঢাবিতে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদের কুশপুত্তলিকা দাহ

ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘শাবিপ্রবির ছাত্র মারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ’ শীর্ষক কর্মসূচি। ১৭ জানুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ‘ছাত্র মারা উপাচার্য’ আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি৷

উপাচার্যের পদ থেকে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একদল শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়কে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। ‘শাবিপ্রবির ছাত্র মারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

কুশপুত্তলিকা দাহ করার আগে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘নিজের আত্মরক্ষার জন্য যে উপাচার্য সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে পারেন, তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য শিক্ষক হতে পারেন না। আমরা অবিলম্বে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করি। ন্যূনতম সম্মানবোধ থাকলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে আমরা আশা করি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার ছাত্র মারা সরকার, তারা ছাত্রবান্ধব নয়। পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছাত্রসমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশের দাবি করেন তিনি।

এই বক্তব্যের পরই অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকায় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা ‘ছাত্র মারা ভিসি, চাই না চাই না’, ‘যে ভিসি গ্রেনেড মারে, সেই ভিসি চাই না’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।

শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীবিরোধী হতে পারে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বর্তমান প্রশাসন তার এক ‘কলঙ্কজনক নজির’ স্থাপন করেছে বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। অবলিম্বে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরা।

আজ সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে পাঁচ দফা দাবি জানান সাবেক এই শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অন্য দাবিগুলো হলো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তদন্ত, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও মানসিক আঘাত নিরাময়ের উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া পূর্ণ দায়িত্বসহ আমলে নেওয়া ও মানা এবং যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তানভীর আকন্দ। এতে বলা হয, ‘আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্তম্ভিত হয়ে লক্ষ করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর শুধু হামলাই করেনি, তাঁদের ওপর জঘন্য কায়দায় শিক্ষক ও পুলিশের দিকে গুলি চালানোর মিথ্যা অপবাদও দিয়েছে।

আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আবার তাঁদেরই অভিযুক্ত করার মাধ্যমে ও শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করে বর্তমান উপাচার্য, প্রক্টরসহ এই প্রশাসন এক ভয়াবহ অন্ধকার অধ্যায় রচনা করেছে। একটা প্রশাসন কতটা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীবিরোধী হতে পারে, তার এক কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করল বর্তমান প্রশাসন। এই হামলার দায় একান্তই বর্তমান উপাচার্য, প্রক্টরসহ পুরো প্রশাসনের।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে।

বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভ

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিক্ষোভ সমাবেশ করে। একই সময়ে একই বিষয়ে বামপন্থী আটটি ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে আরও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন। তাদের দাবিগুলো হলো শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণার অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দালাল উপাচার্যকে অপসারণ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বেলা দেড়টার দিকে টিএসসি থেকে এসব সংগঠনের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে গিয়ে তাঁরা সমাবেশ করেন। সেখানে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত সরকার ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনির্বাচিত উপাচার্যের মধ্যে একটা হৃদ্যতা দেখা যাচ্ছে। এই অনির্বাচিত সরকার যেমন একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে, একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে অনির্বাচিত উপাচার্যরাও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। তা না হলে খুবই সাধারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনোভাবে রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনী যে বর্বর নিপীড়ন করল, তা আমরা দেখতে পেতাম না৷’

ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ স্বীকার করেছে, সেখানে হাতাহাতি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর বলেছেন, কোনো হাতাহাতি হয়নি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগকে রক্ষা করছেন প্রক্টর।

ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকারের সভাপতিত্বে ও ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা রাফিকুজ্জামানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) নেতা মুক্তা বাড়ৈ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ছায়েদুল হক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রিপন চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রায় একই সময়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। জোটভুক্ত সংগঠনগুলো হলো ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। বেলা পৌনে একটার দিকে মধুর ক্যানটিন থেকে জোটের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন জোটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কে এম মুত্তাকী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন।