দুদক কথোপকথনের ছয়টি অডিও ক্লিপ দিয়েছিল

মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছির (বাঁ থেকে)
ফাইল ছবি

ঘুষ গ্রহণের মামলায় দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির এবং পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর নাম মেজর ফাহিম আদনান সিদ্দিকী। তিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেলের (এনটিএমসি) একজন কর্মকর্তা।

আগামী ৮ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার ১৭ জনের মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর আগে এনটিএমসির দুই কর্মকর্তা মেজর নাহিদ আল আমিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাযেম আহমেদ আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এনটিএমসির কর্মকর্তা মেজর নাহিদ আল আমিন আদালতে বলেন, গত বছরের ১৬ জুন দুদকের পরিচালক ফানাফিল্যা এক চিঠি দিয়ে ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরের মধ্যে কথোপকথন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁদের মতামত জানাতে বলেন। পরের দিন মতামত দেওয়ার জন্য এনটিএমসি একটা বোর্ড গঠন করে। বোর্ডের সদস্য ছিলেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোতাহার হোসেন সিদ্দিকী, মেজর নাহিদুল আমিন ও এসপি নাযেম আহমেদ।

দুদক ছয়টি অডিও ক্লিপ তাঁদের সরবরাহ করে। ওই অডিও ক্লিপের বায়োমেট্রিক ম্যাচ করা হয়। আসামি দুজনের মধ্যে নিজস্ব ভয়েস এবং ইউটিউবে তাঁদের সাক্ষাৎকার ভয়েস পাওয়া যায়, তা সংগ্রহ করা হয়। আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল সিমের ডেটা (তথ্য) মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য রাশিয়ান একটি সফটওয়্যার দিয়ে বায়োমেট্রিক ম্যাচ করা হয়। সব তথ্য একত্রে করে গত বছরের ৩ জুলাই সম্পূর্ণ প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদন ছিল ১২ পৃষ্ঠার।

গত ১৮ মার্চ খন্দকার এনামুল বাছির ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। গত ১৯ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। মামলার বাদী দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আদালতে সেদিন বলেছিলেন, খন্দকার এনামুল বাছির দুদকের কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

অপর দিকে ডিআইজি মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়।

অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান—এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে স্বীকার করে নেন। তিনি তখন জানান, এনামুল বাছিরকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন।

বিষয়টি দুদকের নোটিশে এলে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির কাছে লিখিতভাবে খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

আরও পড়ুন