‘নারীস্তান’, মেলা ও তরমুজে বিভোর জনপদ

খুলনার দাকোপের তিলডাঙ্গা মন্দিরে মানতকারী ভক্তদের ভিড়।ছবি: ফারুক ওয়াসিফ

খুলনার বটিয়াঘাটার পশুর নদের পারে প্রতি মঙ্গলবারে হাট বসে। যে সে হাট নয়, একেবারে নারীদের হাট।

দেখে মনে হবে, বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন-এর নারীস্তান বুঝি। সবজি-আনাজের দোকান কিংবা মাছ বা কাঁকড়ার ডালি, ময়রার দোকান, চায়ের দোকান অথবা ঘানির তেলের পসরা—উজ্জ্বল শাড়ি পরা বিভিন্ন বয়সের নারীরাই এসব চালান। মাঝেমধ্যে পরিবারের পুরুষেরাও বসেন। বহু বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে। রেবেকা রানী, উমা সাহা, রীতা মণ্ডলেরা চালাচ্ছেন গ্রামীণ অর্থনীতি। রীতা মণ্ডলের কথা, ‘আমরা শহরের বাজারঘাটে তেমন যাই না। গ্রামের মাল কিনিয়া আইন্যা বেচি। আমার নিজেরও ঘের-বেড়ি আছে, খেতখামার আছে। আমি তরিতরকারি চাষ করি। হাটে আইনে বেচি। ভালোই আছি।’

মেয়েদের এই হাটকে অনেকে বলেন বউবাজার। যতবারই গেছি, ভ্যানে বা নৌকায় বসে থাকা নতুন বউ দেখেছি। জায়গাটা হিন্দুপ্রধান। দোকানি ও ক্রেতাদের মধ্যে মেয়েরা বেশি। সঙ্গেই একটা মন্দির, পালাপার্বণে সেখানে কীর্তন, কবিয়ালি গান ইত্যাদি হয়। আরেক পাশে বটিয়াঘাটা শ্রুতিকলা একাডেমি। এই সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরেশ বিশ্বাস গল্প করছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা মোতোয়ালি শেখের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘আমরা জানতাম না বুইজলেন, এই বটিয়াঘাটার জলমা চাল ভারতে রপ্তানি হয়। একবার সেখানকার এক আড়তদারের সঙ্গে দেখা, চাল কিনতে আইছে। সে আমারে কয়, তোমাগে জলমা চাইলে জন্মের স্বাদ।’ পানে লাল মুখ নিয়ে মোতোয়ালি শেখ জানালেন, ‘আগে হাটডা ছিল নদীর ওই পারে জলমা ইউনিয়নে। তার পরে নদী ভাইঙ্গে নিয়ে গেলে এইখানে আইসে বসছে। সেই থেকে চলছে। নদীর এপার-ওপার মিলিয়ে সে এক শ বছর তো হবেই।’

হাটের লাগোয়া ডাক্তারের ঘরটাও চালান একজন নারী, ডা. নিভাসিনী বৈরাগী, বিএসসি, বিএ, ডিএইএমএস। হাট পেরোলেই দেখা যাবে নাজিরা পারভীন পরিচালিত স্কুল লিভিং টিচিং একাডেমি। বটিয়াঘাটা বাসস্ট্যান্ডে খালের ওপর মাচায় তৈরি আল অ্যারাবিয়া হোটেল। প্রবাসফেরত স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে নাহার বেগম চালান এই হোটেল। লোকে ফোন দিয়ে বললেই হয়, ‘নাহার আপা, আজ হাঁস খাব, আসতেছি।’

মাইকে মেলার সংবাদ

বটিয়াঘাটার সেই সুস্বাদু চুঁই ঝালের হাঁস খেতে খেতে মাইকে শোনা গেল তিলডাঙ্গা মেলার খবর। ৯ মার্চ ছিল ২২৭ বছরের পুরোনো সেই ‘ঐতিহাসিক মেলা’। আসবে লাখো মানুষ। তখন দুপুর। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে পড়া গেল। চালক জাহিদুল জানালেন, ২২ কিলোমিটার দূরে পানখালী ফেরিঘাট। সেটা পেরিয়ে আরও মাইল বিশেক গেলে তিলডাঙ্গা মাঠ। সেখানে সারা রাত চলে বার্ষিক কালীপূজার মেলা। লাখো মানুষ মানত করতে আসে। বলি হয় চার-পাঁচ শ পাঁঠা।

যে কথা সেই কাজ। চললাম তিলডাঙ্গার মাঠের দিকে। নদীর ধার দিয়ে সুন্দর রাস্তা। ছয় বছর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর এই পথে দাকোপ গিয়েছিলাম। তখন পথ ছিল ভাঙাচোরা। এখন মসৃণ পিচঢালা পথ হয়েছে। খাল ও নদীর ওপর বসেছে নতুন সেতু। পথের দুধারে ভাঁটফুল, তুষফুল, শিমুল, কুর্চি আর জবাগাছের সারি। কাটা ধানের নাড়ায় মাঠ প্রায় বাদামি। রোদেলা নদীতে চলছে মালবাহী জাহাজ।

আশা-নিরাশার জোয়ার-ভাটা

অঞ্চলটা পুড়ে যাচ্ছিল লোনাপানিতে। বাঁধ কেটে জমিতে নোনাপানি ঢুকিয়ে চিংড়ি, কাঁকড়ার চাষ হতো। ফলে ধান হতে পারত না। ঘেরের অনেক মালিকই জোতদারের মতো। কৃষকের হতো সর্বনাশ। এ নিয়ে অনেক খুনোখুনি হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের চাপে চিংড়িঘের একেবারে না সরলেও কমে যাচ্ছে। অনেক জায়গাতেই আবার নোনাপানি ঠেকানোর বাঁধ। তাই বর্ষার পর একবার ধান হতে পারছে। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সেই ধানও নষ্ট হয়েছে অনেকের। সবচেয়ে বিপন্ন হয়েছিল দাকোপ, কয়রা ও বটিয়াঘাটা। ধানের মৌসুমে বারবার ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় এসব এলাকার কৃষকেরা হতাশ। কিন্তু তাঁরা এবার নতুন বুদ্ধি করেছেন। এলাকায় যেখানেই যাও, তরমুজ চাষের সংবাদ। রাস্তার দুধারে কোথাও তরমুজের চারা জেগেছে, কোথাও জমি তৈরির কাজ চলছে। প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রামে করে জমিতে মিঠাপানি জমানো হচ্ছে। এই মিঠাপানি খাল বা পুকুর থেকে পাইপে করে আনা। নদীর পানি তো নোনা। নোনাপানির জোয়ার এ অঞ্চলের আরেক অভিশাপ।

পানখালীর তারক বিশ্বাস নিজের জমিতে এবার তরমুজের খামার করবেন। গত কয়েক বছরে যাঁরাই তরমুজ করেছেন, তাঁরাই বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ করেছেন। গত বছর এ জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। জেলার মোট উৎপাদিত তরমুজের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ চাষ হয় ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত দাকোপ উপজেলায়। এবার নতুন যোগ হয়েছে তিলডাঙ্গা, পানখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। ধানে মার খাওয়া কৃষকের এখন তরমুজই ভরসা। তরমুজের সুবিধা হলো, ফল ফলে দ্রুত, আর দামও পাওয়া যায়। অসুবিধাটাও মারাত্মক, অসময়ে বৃষ্টিবাদলের ভয়। তিলডাঙ্গা মেলার মন্দিরে রোগমুক্তি, সন্তান প্রার্থনা, চাকরির জন্য মানতের পাশাপাশি দেখা গেল তরমুজের ফলন বাঁচানোর জন্যও নিবেদন চলছে।

খনা গ্রামের রবিউল শেখ ও চেতন সর্দার

কৃষক রবিউল শেখ আর রথীন সর্দার ফিরছিলেন মাঠ থেকে। ভদ্রা নদীর পারে তিলডাঙ্গা বাজারে কথা হয় তাঁদের দলের সঙ্গে। বললেন, ‘আশ্বিন মাসে নদী ভাইঙ্গে নোনাপানি ঢুইকে পড়ে। ফসল পাইনি। বিঘাপ্রতি এক মণ-দেড় মণ।’ সরকার থেকে সাহায্য আসেনি?

‘আসিছে, তবে যাদের দরকার, তারা পায়নি। ধরেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পানি ঢুকিছে এ মাথায়, কিন্তু সাহায্য পাইছে ওই মাথার কিছু লোক। যাদের দরকার, তারা পায়নি। নেতা-কর্মীরা আর তাদের নিজস্ব লোকেরা পায়িছে।’ পাশ থেকে একজন মন্তব্য করলেন, ‘সাহায্য নিয়ে মেম্বররা ইলেকশনের ব্যবসাও করিছে।’

আজ তাঁদের একটু তাড়াহুড়া। বাড়িতে গিয়ে মতিন শেখ গা-গোসল করে বাজারে আসবেন, মেলার লোক দেখবেন। আর রথীনেরা সপরিবার যাবেন মেলায়। মেলায় দেখা গেল অনেক মুসলমানের দোকান। সচ্ছল হিন্দুরা দেবীর থানে পাঁঠা বলি দিয়ে মানত করবেন। একটু গরিবেরা দেবেন ঘড়াভর্তি বাতাসা। বাজারের যে দোকান থেকে ঘড়াভর্তি বাতাসা বিক্রি হয়, সেটির মালিকও মুসলমান। তাতে কারও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। রথীন সর্দারের জবানে শোনা যাক: ‘এলাকায় হিন্দু-মুসলমানে মিলেমিশে বেড়াই। কারও সঙ্গে কোনো কাউস-ক্যাচাল নাই।’

বিকেলের আলোয় পাশাপাশি দুজন চললেন খনা গ্রামের দিকে। তাঁদের ডানে ভদ্রা নদী। রবিউল শেখের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ ম্যাপে ভদ্রা নদীর কোনো শ্যাষ নেই। ওদিকে সুন্দরবন দিয়ে সাগরে গেইছে, এদিকে গেইছে আরও পনেরো মাইল। আগে বেশ ভাঙত। এখন বাঁধ পড়িছে। বাঁধের ভেতরে মিঠাপানিতে মাছ চাষ হয়, জমিতে তরমুজ, বাঙ্গি, কাউড়ি, শসা, ভেন্ডি (ঢ্যাঁড়স) হয়।’

২২৭ বছরের মেলার মাঠ যেন জনসমুদ্র

বটিয়াঘাটার অটোরিকশা নামিয়ে দিয়েছিল পানখালীর ফেরিঘাটে। ছোট ফেরিতে দুটি বাস আর অনেক মোটরসাইকেল। বাসযাত্রী ছাড়াও মানুষে ভরাট। সব চলেছে তিলডাঙ্গার মেলায়। ভদ্রা নদীর এই ঘাটে শুশুকের দেখা মিলল। দেখা মিলল ঢোল-করতাল নিয়ে চলা বৃদ্ধা-কিশোরী-যুবতীদের একটি দলের সঙ্গে। তরুণ শোভন, মিলন, দীপকরাও দল বেঁধে চলেছে, মেলা দেখবে, রাতটা মেলার মাঠে কাটাবে।

গ্রামবাংলার মেলা এমন জিনিস যে পিঁপড়ার সারির মতো মানুষের ঢল দিয়ে তার বিস্তার বোঝা যায়। আশপাশের অনেক গ্রামে আজ উৎসব। বাড়ির উঠানগুলো সুন্দর করে নিকানো। দেখতে দেখতে বিকেল চারটায় এসে পৌঁছালাম মেলার মাঠে। তেপান্তরের মাঠও বোধ হয় এর চেয়ে ছোট। চতুর্দিক থেকে আসা মানুষের পায়ের চাপে ধানের নাড়াগুলো সমান হয়ে খড়ের মাদুরের মতো বিছিয়ে আছে। মানুষ আসছে হেঁটে, অটোরিকশায় করে, মানুষ আসছে মোটরসাইকেল করে, মানুষ আসছে ভদ্রা নদী দিয়ে ট্রলারে ভরে।

মাঠে গান বাজছে, চরকি ঘুরছে, বেতের জিনিস, মাটির জিনিস, পিতলের জিনিসসহ শাড়ি-জামা-জুতা—কী নেই। মেলার মাইকে যিনি উপস্থাপনা করছেন, তিনি বেশ সরল ও মজার। যখন যা তাঁর মনে আসে, সব অকাতরে বলে ফেলেন। ২২৭ বছরের মেলার গুণকীর্তন করতে করতে তাঁর কানে খবর এল, কার যেন মুঠোফোন ছিনতাই হয়েছে। মেলার মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাইক্রোফোন খোলা রেখেই পাশের কাউকে বললেন, ‘এবার প্রশাসন আসেনি? প্রশাসনের কেউ আসেনি? প্রশাসন আসপে না এবার? ডিউটি দেবে না?’ তাঁর কণ্ঠে হতাশা। মাইকে ফুঁ দিয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি সকল ভলান্টিয়ার ভাইদের বলছি, আপনারা সবাই পুলিশ কাউন্টারে চলে যান। আমাদের ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ওখানে যাচ্ছেন, সেখান থেকে সব ফর্দকে ডিউটি বণ্টন করা হবে।’ ফর্দ হলো কাজ বণ্টনের তালিকা। একটু পরই তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেক চড়ে গেল। ‘আমি ছিনতাইকারীদের বলছি, আপনারা মাঠ থেকে চলে যান। এখানে প্রশাসনের লোকজন এসে গেছেন, আমি সবাইকে বলব সাবধানে ঘোরাফেরা করবেন।’

ভদ্রা নদীর পারে দুঃখ নিবারণের উৎসব

ভয় অমূলক। সবখানেই সাদাপোশাকের পুলিশ রয়েছে। রাত আটটার দিকে পুরো মাঠ ভরে গেল। আরেকটু হলেই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কালী মাতার মন্দিরে প্রবেশের লগ্ন এসে গেছে। শত শত নারী-পুরুষ একসঙ্গে উলুধ্বনি করছেন, কাঁসা বাজছে, ভিড়ের উত্তোলিত অজস্র হাতের নিবেদন চলছে। মেলার গুঞ্জন, মন্দিরের বাজনা, নদীর হাওয়া, নারীদের উলুধ্বনি মিলিয়ে যেন কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণ।

এরপর শুরু হলো মানতের পালা। গ্রামের মানুষের যত রকমের দুঃখ-কষ্ট, চাওয়া-পাওয়া আছে, সবকিছুর জন্য মানত। পাইকগাছা থেকে এক মধ্যবিত্ত মা এসেছেন অসম্ভব রূপসী পুত্রবধূ, দেবীর মতো সুন্দর কন্যা আর মা-দিদিদের নিয়ে। পুত্রবধূর জন্য সন্তান কামনার মানত করবেন স্বর্ণালংকার দিয়ে। বাগেরহাট থেকে কয়েকটি পরিবার একটি ছাগল নিয়ে মাঠ পেরোচ্ছিল। ছেলের চাকরি হলে পাঁঠা বলি দেবেন বলে মানত করেছিলেন গত বছর, এবার তা পূরণ করতে আসা। এমনি করে কারও বৃদ্ধ বাবার হাঁটুতে ব্যথা, কারও স্ত্রী অসুস্থ, কারও মেয়ের জন্য সুপাত্রের আশা। কৃষকেরা তাঁদের সাধারণ স্বপ্নগুলো দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে তিলডাঙ্গার প্রান্তর। ২২৭ বছর আগে নড়াইলের জমিদার নৃপেন্দ্র কিশোর রায় এ পূজা প্রথম শুরু করেছিলেন বলে বলা হয়। কিন্তু জমিদার আর কোথায়, এ যেন কৃষকের দুঃখ নিবারণের উৎসব।

কাঁদতে কাঁদতে ভ্যান চালাচ্ছে এক বালক

রাত নয়টায় যখন ফিরছি, তখনো মানুষের ঢল আসছিল। সেই ভিড়ে যানবাহন পাওয়ার উপায় নেই। এরই মধ্যে দেখি এক খালি ভ্যান। চালাচ্ছে হাফপ্যান্ট পরা এক কিশোর। তার চোখে পানি। জিজ্ঞাসা করে জানলাম তার নাম ওহিদুল। মা-বাবা দুজনেই আলাদা আলাদা বিয়ে করে চলে গেছেন। তার ভাষায়, ‘আমারে নেয় না। সবাই তো স্কুলে যায়, আমার কেন এমন হলো?’ তো তুমি এখন কান্দ কেন?

‘মেলায় একজনারে নিয়ে গিইছিলাম। পুলিশ তো ভ্যান নিতি দেবে না। সে আমারে বলিছিল মিথ্যা বলে ঢুকতি। আমি তা বলিনি। চট করে কি মিথ্যা কতা মুখে আসে বলেন? বলিনি বলে অনেক পথ ঘুরে যাতি হয়েছে। এই জন্য আমারে বকল, ভাড়া দিল না।’

ওহিদুল সাত বছর বয়সে ঢাকার আমিনবাজারের ভাটায় কাজ করেছে দুই বছর। পেয়েছিল ২০ হাজার টাকা। ১০ বছর বয়সে গিয়ে এক মৌসুমে পায় ১০ হাজার টাকা। এখন ভ্যান চালায়। বাড়িতে তালাকপ্রাপ্ত বোন। আজ তার দুঃখের শেষ নেই। ভ্যানগাড়ির তিন দিনের জমা দিতে হবে মহাজনকে। ‘কিন্তু বাচ্চা বলে কেউ আমার ভ্যানে চড়তি চায় না। তা আমি কী করব কন? আমার তো চালাতি হবি।’ তিলডাঙ্গা থেকে সাবেক সমুদ্রবন্দর চালনায় এসে সে আমাদের নামিয়ে দিল। পথের মধ্যে চেনাল তুষফুল, কীভাবে তা থেকে কম্বল তৈরি হয়, কাকে বলে জিবলাগাছ, কাকে বলে গেওয়াগাছ। তার কোঁকড়া চুলের কালো ‍মুখে দুঃখের কাঠিন্য। তিলডাঙ্গার ঘরে ঘরে আনন্দ। একটি বালক শুধু কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যাচ্ছে। সেখানে তার অপেক্ষায় আছেন তালাকপ্রাপ্ত এক বোন।

ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক

[email protected]