নিয়ামকেরাই বঞ্চনার শিকার

বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা নিয়ে দিনাজপুর-৬ আসন। এই চার উপজেলায় প্রচুরসংখ্যক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাই জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটের ফলাফল নির্ধারণে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে এ জাতিগোষ্ঠী।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিনাজপুরে কাজ করছে ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ চার উপজেলায় ২৮০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লক্ষাধিক মানুষ বাস করে। এর মধ্যে ভোটার ৫৪ হাজারেরও বেশি।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৭২ জন। বিভিন্ন এনজিওর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, মোট ভোটারের ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন।

জানা গেছে, যেকোনো নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এই আসনের অধীন বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার, হত্যাকাণ্ডসহ নির্যাতনের বিচার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সরকারি বরাদ্দের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের এসব দাবি কোনো সরকারই পূরণ করেনি।

এ জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচন এলে এ জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তাঁরা বঞ্চিতই থাকেন প্রাপ্য অধিকার ও সেবা থেকে। 

বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা বেশি। তাঁদের অধিকাংশ ঘরই মাটির। প্রায় সব গ্রামেরই যোগাযোগের রাস্তা কাঁচা। 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন জানান, দিনাজপুর-৬ আসনের আদিবাসীদের ৬ হাজার একর জমি বন বিভাগ গেজেটভুক্ত করেছে। গেজেটভুক্ত করা এসব জমি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নামে সিএস এবং আরএস রেকর্ড রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এসব এলাকার  প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার একর জমি। শুধু জমি নয়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কবরস্থান পর্যন্ত দখলে নেওয়া হয়েছে। শুধু নবাবগঞ্জেই তাঁদের জাতিগোষ্ঠীর ১২ জন সম্পদশালী সদস্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে খালিপপুর গ্রামের ফাগু সরেন এবং তাঁর দুই ছেলে ঢুডু সরেন ও গোসাই সরেন রয়েছেন। আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর ঘটনায় মামলা পর্যন্ত হয়নি। গত এক দশকে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর সঠিক বিচার হচ্ছে না। ভূমি রক্ষাসহ নির্যাতনের সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা পান না ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।

নবাবগঞ্জ সান্তাল স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি মিকায়েল টুডু বলেন, শিশুদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠদানের জন্য আজও সরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাসকারী গ্রামগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি।