পারভীন অথবা গাব্রিয়েলা, গল্পটি একই

প্রতীকী ছবি

পারভীনের (ছদ্মনাম) বয়স ছিল ১০ কি ১১ বছর। সে ঢাকায় একটি পরিবারের সঙ্গে থাকত। পরিবারটির গৃহকর্ত্রী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মেয়ের বয়স যখন চার বছর, তখন পারভীনকে তাঁদের বাসায় আনা হয়। সে টুকটাক কাজ করত। তাঁর সঙ্গে খেলত, পড়ত।

হুট করেই একদিন পারভীনকে গ্রামে নিয়ে যান তার বাবা। যাওয়ার আগে তিনি জানিয়ে যান, মেয়েকে আর কাজ করাবেন না।

ওই গৃহকর্ত্রী বলেন, তিন বছর পর তিনি গ্রামে বেড়াতে গিয়ে খবর পান পারভীনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। রোজ সকালে দুই বেণি বেঁধে স্কুলে যায়। আর পারভীন তখন ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক মুদিদোকানির স্ত্রী। দুর্বল এক ছেলেসন্তান তার কোলে।’

দেশের অনেক মেয়ের গল্পটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার পারভীনের মতোই। ১৮ বছরের অনেক আগেই তাদের বিয়ে হয়। স্কুল ছাড়তে হয়। ভার নিতে হয় সংসারের, সন্তানের।

বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে মেয়েদের জীবন কীভাবে পাল্টে যাচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ছে, তা দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা ও প্রকাশনায় উঠে আসছে। দেশভেদে বাল্যবিবাহের কারণ ও ধরনগুলো উল্লেখের পাশাপাশি তা প্রতিরোধে দেশগুলো কতটা এগিয়েছে, তা-ও বলা হচ্ছে। গত মাসে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) একটি প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। এতে বাল্যবিবাহের কারণ, এর ক্ষতিকর দিক, ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা ও কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়।

বাল্যবিবাহের পেছনের গল্প

বাল্যবিবাহের পেছনে পরিবার ও অভিভাবকের ভূমিকার কথা আসে সবার আগে। আইনত নিষিদ্ধ হলেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক পরিবার সন্তানকে বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হয়। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখন মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৈশোরে প্রেমের সম্পর্ক, স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার ইচ্ছা, যৌনসম্পর্কের কারণেও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। যেমনটা ঘটেছিল ব্রাজিলের ১৬ বছর বয়সী গাব্রিয়েলার (ছদ্মনাম) বেলায়। ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলে ১৮ বছরের আগে বিয়ের আইনি বৈধতা নেই। তবে গাব্রিয়েলা ৩৬ বছর বয়সের এক পুরুষের সঙ্গে থাকত। যদিও সে পড়াশোনা বন্ধ করেনি। এত অল্প বয়সে এমন জীবন বেছে নেওয়ার কারণটাও সে বলেছে অকপটে। গাব্রিয়েলা বলে, ‘আমার মায়ের নতুন স্বামী আমাকে পছন্দ করেন না। এ কারণে আমি সঙ্গীর সঙ্গে থাকি।’

রাজশাহীর সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আসমার (ছদ্মনাম) গল্পটি সুদূর ব্রাজিলের কিশোরী গাব্রিয়েলার মতোই। আসমার সঙ্গে পাশের বাড়ির ২১ বছরের এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের কথা জেনে মা-বাবা আসমাকে নিয়ে শহর ছাড়তে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে একদিন বইয়ের বদলে ব্যাগে জামাকাপড় নিয়ে স্কুলে যায় আসমা। বান্ধবীকে জানায়, সে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে পারিবারিকভাবে আসমা ও সেই তরুণের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার আগেই প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়ার পর আসমার পড়াশোনা আর এগোয়নি।

অবশ্য বাল্যবিবাহের পেছনে এমন ঘটনার যুক্ততার হার কতটা, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জরিপ, গবেষণা বা গণমাধ্যমে আসা খবরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিক ও নিরাপত্তার শঙ্কা থেকেই অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা।

ইউএনএফপিএ বলছে, বিশ্বে যেসব দেশে মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়, তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মৃত্যুর বড় কারণ প্রসব ও গর্ভকালীন জটিলতা। এমনই জটিলতার শিকার হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাসিন্দা শাহিনা (ছদ্মনাম)।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দুটি কনভেনশনে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো হলো কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড (সিআরসি) ও কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব অল ফর্মস অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন (সিইডিএডব্লিউ)। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালের ৩ আগস্ট সিআরসি কনভেনশনে ও ১৯৮৪ সালে সিইডিএডব্লিউ কনভেনশনে সই করে।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুসারে ১৮ বছর কম বয়সী মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ধরা হয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে, বিশেষ বিধানের আওতায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে। তবে সেটা হবে আদালতের মাধ্যমে।

বাল্যবিবাহের শিকার হলে মেয়েদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। ১৮ বছরের আগে বিয়ের পর মেয়েদের বড় ঝুঁকি সন্তানধারণ। ইউএনএফপিএ বলছে, বিশ্বে যেসব দেশে মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়, তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মৃত্যুর বড় কারণ প্রসব ও গর্ভকালীন জটিলতা। এমনই জটিলতার শিকার হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাসিন্দা শাহিনা (ছদ্মনাম)। বিয়ের দুই বছর পর ১৫ বছর বয়সে সন্তান ধারণ করেছিল সে। অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা ও অপরিণত বয়সে সন্তানধারণের জটিলতার কারণে সে মারা যায়।

অগ্রগতি আছে, তবে যথেষ্ট নয়

আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ার পর মেয়েরা দ্বিতীয় দফায় ঝুঁকিতে পড়ছে। তারা সন্তানধারণের ঝুঁকিসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। তবে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি একেবারে হতাশাজনক, তা বলা যাবে না। কিছু অগ্রগতি রয়েছে। বাল্যবিবাহের বৈশ্বিক প্রবণতা ও বাল্যবিবাহ রোধে অগ্রগতি বিষয়ে ইউনিসেফের ‘টুওয়ার্ডস এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ: গ্লোবাল ট্রেন্ডস অ্যান্ড প্রোফাইল অব প্রোগ্রেস’ শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০১১ সালের তুলনায় ২০২১ সালে, অর্থাৎ ১০ বছরে বাল্যবিবাহের হার কমেছে ১৫ শতাংশ। ১০ বছর আগে প্রতি চারজনে একজন বাল্যবিবাহের শিকার হতো। এখন প্রতি পাঁচজনে একজন বাল্যবিবাহের শিকার হয়।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠন ‘ঘাসফুল’–এর সদস্যরা। ময়মনসিংহের নান্দাইলে
ফাইল ছবি

২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের ওপর পরিচালিত ওই জরিপে বাংলাদেশ, ভারত, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আর্মেনিয়া, মালদ্বীপ, রুয়ান্ডা, তিউনিসিয়াসহ কয়েকটি দেশের পরিস্থিতির উল্লেখ করা হয়। দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে ৮০ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হতো। ২৫ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে ৫০ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতেও বাল্যবিবাহ কমেছে। ১৯৯১ সালে দেশটিতে প্রতি ১০ জনের ৬ জন বাল্যবিবাহের শিকার হতো। ২০১৬ সালে চারজনের একজন বাল্যবিবাহের শিকার হয়। ইন্দোনেশিয়ায় গত ২৫ বছরে বাল্যবিবাহ অর্ধেক কমেছে।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট স্ট্যাটিসটা ডটকমের ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের হিসাবে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি ছিল আফ্রিকার দেশ নাইজার ও চাদ এবং বাংলাদেশে। ভারতের অবস্থান ১২ নম্বরে।

স্ট্যাটিসটা ডটকম বলছে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে ১৮ বছরের কম বয়সে মেয়েদের বিয়ের হার ৬৬। ভারতে তা ৪৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ নাইজারে—হার ৭৫ শতাংশ। চাদে এ হার ৬৮।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ অনুসারে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫১ দশমিক ৪ শতাংশের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়।

যেসব পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহ বাড়ে

সব পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের অগ্রগতি একই মাত্রায় থাকে না। ইউএনএফপিএ বলছে, সহিংসতা, বাস্তুচ্যুত হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষা ব্যাহত হয়। এসব ঘটনা বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ায়। যৌন সহিংসতার ঝুঁকি, মেয়েদের নিরাপত্তা ও পারিবারিক সম্মান নিয়ে উদ্বেগ থেকে বাল্যবিবাহের দিকে ঝুঁকতে পারে অনেক পরিবার। যেমন করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। ২০২০ সালে দেশের ১১ জেলায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাল্যবিবাহ আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। ব্র্যাকের কর্ম এলাকায় ৫৫৭ জন নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে ওই সমীক্ষা করা হয়েছিল।

গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের পেছনে বড় কারণ হলো দারিদ্র্য ও মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্ক জানলেও ধর্ষণ, ইভ টিজিং থেকে মেয়েকে রক্ষার জন্যও অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম

করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ কতটা বেড়েছে, তা দেখার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। ৯টি জেলার ৭৬টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে ৯ জেলায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে খুলনায়।

বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেতে অনেকে পুলিশ, শিশু সুরক্ষাবিষয়ক সংস্থা, হাসপাতাল ও হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা চায়। ইউএনএফপিএ বলছে, গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিয়ে একটি হেল্পলাইনে ৪৫০টি ফোন আসে। এর এক মাস আগে ফোন এসেছিল ৩২২টি। অর্থাৎ এক মাসে ফোন বেড়েছে ১২৮টি।

সুসংবাদও আছে

অবশ্য অনেক মেয়ে নিজেই বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে আলোচনায় আসছে। ভারতে ১৬ বছরের শান্তি (ছদ্মনাম) স্কুলের পাঠ্যবইয়ে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জেনেছিল। দূরসম্পর্কের ২৫ বছরের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। শান্তি বিয়েতে রাজি হয়নি। বান্ধবীদের বলেছে, ‘আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমি পড়তে চাই। এটা আমার জীবন। আমার অধিকার আছে।’

ভারতের শান্তি যখন নিজের অধিকারের কথা বলছে, তখন পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাত ছাত্রীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ঘাসফুল’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ২০১৭ সালে পরপর কয়েকটি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে তারা। এখনো বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করছে ঘাসফুল। সেই সাতজন এখন ঢাকা ও ময়মনসিংহে পড়াশোনা করলেও ঘাসফুলের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

শুধু সংগঠন নয়, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একাও লড়ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিবারের কাউকে বোঝাতে না পেরে নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে থানায় হাজির হয় চুয়াডাঙ্গা সদরের বর্ষা নামের একটি মেয়ে; রক্ষা পায় বাল্যবিবাহ থেকে।

বাল্যবিবাহ রোধে কত খরচ

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগের কথাও বলছে ইউএনএফপিএ। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা অ্যাভেনির হেলথের সহযোগিতায় ইউএনএফপিএ এবং জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছে। ‘কস্টিং দ্য থ্রি ট্রান্সফরমেটিভ রেজাল্টস’ নামের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ৬৮ দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রের খরচের খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

এ মাস থেকে বাল্যবিবাহ রোধে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও থানায় মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম

২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৮টি দেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাবে। এতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। একটি বাল্যবিবাহ বন্ধের প্রকল্পে খরচ পড়বে ৫১ হাজার ৮০০ টাকা (৬০০ ডলার)। গবেষণা বলছে, শিক্ষার উন্নতি, নারী ক্ষমতায়ন, জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচির মতো খাতগুলোতে এ অর্থ ব্যয় করলে সামাজিক অবস্থা বদলানো যায়। ফলে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ বাল্যবিবাহ রোধ করা যাবে।

বাংলাদেশে এ বছর বাল্যবিবাহ রোধে নতুন করে কিছু প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মাস থেকে বাল্যবিবাহ রোধে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও থানায় মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হবে।

‘বড় কারণ দারিদ্র্য ও নিরাপত্তার অভাব’

২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ ১২টি দেশে বাল্যবিবাহ রোধ নিয়ে কাজ করেছে। ‘গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু অ্যাকসিলারেট অ্যাকশন টু এন্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭২ লাখ মেয়ের ক্ষমতায়ন করা হয়।

তবে বাল্যবিবাহ রোধে নারীর ক্ষমতায়ন বা সচেতনতাই একমাত্র সমাধান, এমনটা মনে করেন না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের পেছনে বড় কারণ হলো দারিদ্র্য ও মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্ক জানলেও ধর্ষণ, ইভ টিজিং থেকে মেয়েকে রক্ষার জন্যও অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়।