প্রতিবন্ধী নারীদের তিন-চতুর্থাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার

প্রতীকী ছবি

প্রতিবন্ধী মেয়ে ও নারীদের মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হন প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৩০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি প্রতিবন্ধী মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগে।

আজ সোমবার এসডিজি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারনীতির আলোকে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারবিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় এ গবেষণা হয়। পাঁচ হাজার প্রতিবন্ধীর ওপর গবেষণার জন্য জরিপ চালানো হয়।

জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ফাতেমা আক্তার প্রতিবেদনটি ভার্চ্যুয়াল এক পলিসি ডায়ালগে তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ নারী ও মেয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৩ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। প্রতিবন্ধী মেয়েদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ ধারণা রাখে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। তাদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি জানেন। নারীদের এ সংখ্যাটা ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেখানে পুরুষের সংখ্যা ২৯ দশমিক ২ শতাংশ।

বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন ও পরিকল্পনা সম্পর্কেও নারীরা জানেন বেশি। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সম্পর্কে জানেন ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ৩৬ শতাংশ এবং মেয়েদের ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ।

প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অন্তত একবার পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণা জরিপের তথ্য দেখা গেছে জরিপ চালানোর আগের এক বছরে ৫১ দশমিক ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যায় ভুগেছেন। এঁদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা চেয়েছেন।

প্রতিবন্ধী মেয়েদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়।

ছেলেদের বেলায় ২১ বছরের আগে বিয়ে হওয়ার হার ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী কখনোই শিক্ষার সুযোগ পাননি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ গবেষণার পাশাপাশি কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। সেগুলো হলো এসডিজির সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষ্য অর্জন করার জন্য এর সূচকগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে, যারা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং সমতা নিয়ে কাজ করে তাদের প্রতিবন্ধীদের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান বাড়াতে হবে, প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের প্রচার ও সুনিশ্চিতকরণ এবং সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় সংযুক্ত করতে না পারলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যেসব মন্ত্রণালয় কাজ করে তাদের সমন্বয় করে কাজ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আশরাফী আহমেদ বলেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানা সবার অধিকার। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানলে সহিংসতা কমে আসবে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বাল্যবিবাহকেও উদ্বেগজনক বলে জানান। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।

প্রতিবন্ধীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলাদা করে কাজ না করলেও অন্য যে মন্ত্রণালয় কাজ করে সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যুক্ত রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (অটিজম সেলের প্রধান সমন্বয়ক) এ এম পারভেজ রহিম।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহযোগী অধ্যাপক মো. তানভীর হাসানের সঞ্চালনায় পলিসি ডায়ালগে আরও বক্তব্য দেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের মানবাধিকার ও জেন্ডারবিষয়ক কর্মকর্তা ভেরোনিকা ফ্লেগার, ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি, টেকনোলজি ও পার্টনারশিপ পরিচালক কে এ এম মোরশেদ, ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন সাবিনা ফয়েজ রশিদ এবং অ্যাকসেস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা মহুয়া পাল।