বন রক্ষার জন্য দরকার হলে মরে যাব

সিটি ব্যাংক-তরুপল্লব দ্বিজেন শর্মা নিসর্গ পুরস্কার ২০২১ অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। আজ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনেছবি: খালেদ সরকার

‘দেশ রক্ষা (স্বাধীনতাযুদ্ধ করে) করতে পেরেছি। বন কেন রক্ষা করতে পারব না। বন রক্ষার জন্য দরকার হলে মরে যাব।’ বন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি পাওয়ার পর মঞ্চে দাঁড়িয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানান যতীন রায় চাকমা। তিনি বলেন, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ৭ গ্রামের বাসিন্দারা ২৮ বছর ধরে মায়ের স্নেহে এলাকার বন আগলে রেখেছেন। এই বন তাঁদের জীবিকার প্রধান ক্ষেত্র। সারোয়াতলী সংরক্ষিত বনাঞ্চল কমিটির নামে বনটি প্রতিমুহূর্তে যত্নে রাখা হচ্ছে। যতীন রায় চাকমা সেই কমিটির সভাপতি। কমিটির পক্ষ থেকে তিনি আজ শনিবার সন্ধ্যায় ‘সিটি ব্যাংক–তরুপল্লব দ্বিজেন শর্মা নিসর্গ পুরস্কার ২০২১’ গ্রহণ করেন।

জীববিজ্ঞানী, প্রকৃতিপ্রেমী ও নটর ডেম কলেজের প্রয়াত শিক্ষক দ্বিজেন শর্মার স্মরণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘তরুপল্লব’ চতুর্থবারের মতো এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।

বৃক্ষ ও প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে চারজনকে এবং বন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ শাখায় সারোয়াতলী সংরক্ষিত বনাঞ্চল কমিটিকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য পুরস্কার পান পাখিবিজ্ঞানী ইনাম আল হক। বৃক্ষসখা সম্মাননা পান বৃক্ষপ্রেমী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা, রাজিয়া সামাদ ও সালমা বিনতে নূর। বন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য—এ দুটি শাখায় ১ লাখ টাকার চেক আর বৃক্ষসখা শাখায় ২৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে। ইনাম আল হক ও রাজিয়া সামাদ পুরস্কারের অর্থ তরুপল্লব সংগঠনকে দান করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো.শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র সংবিধানে এ–সংক্রান্ত ধারা যুক্ত করেছে। সরকার নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির আয়তন বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের জন্য দায়ী না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধে৵ একটি। বৃক্ষরোপণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় তরুপল্লবের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, চেতনাকে মানবিক বোধ এবং প্রকৃতি–সংশ্লিষ্টতায় রাখতে হবে। দ্বিজেন শর্মা ছিলেন অনুপ্রেরণার মানুষ। প্রকৃতিকে ভালোবেসে যে জায়গা তিনি তৈরি করে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছেন, সেই জায়গাকে ধারণ করতে হবে। সেই প্রেরণায় প্রকৃতিপ্রেমী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস আইনুন নিশাত বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গতানুগতিক কাজ না করে পৃথিবী যেদিকে এগোচ্ছে, সেদিকে দেশকে এগোতে হবে। বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতির গাছ লাগানো যাবে না। এ ধরনের জীবজন্তু ও মাছ পরিহার করতে হবে। দ্বিজেন শর্মা নতুন প্রজাতির আদি নিবাস খুঁজে বের করে নাম দিতেন। তাঁর পথ ধরে এগোনোর মাধ্যমে তাঁকে প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।

সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিবেশের এখন দূরত্ব রয়েছে। তরুপল্লব সংগঠনটি যেন তাদের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়, পরিবেশকে ভালোবাসতে শেখায়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং পুরস্কার প্রবর্তনের প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরেন।