মহিউদ্দিনের গলায় '৪১ তালিকার' মামুনের মালা

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মালা পরিয়ে দিচ্ছেন মামুনুর রশীদ (সাদা কটি, কালো মাফলার পরা)।  ১ ডিসেম্বর ছবিটি তোলা l সংগৃহীত
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মালা পরিয়ে দিচ্ছেন মামুনুর রশীদ (সাদা কটি, কালো মাফলার পরা)। ১ ডিসেম্বর ছবিটি তোলা l সংগৃহীত

ভারতে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের ৪১ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে (এনআইএ) ওই তালিকা দিয়েছে র্যা ব। র্যা ব-পুলিশ খুঁজে না পাওয়া ওই সন্ত্রাসীর নাম মামুনুর রশীদ। অথচ গত ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে তাঁকে। সাবেক মেয়রকে মালাও পরিয়ে দিয়েছেন তিনি। 
মামুনুর রশীদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত ওই পরোয়ানা জারি করেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর দুপুরে জিইসি মোড়ে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে যান সাবেক মেয়র। মামুন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সেখানে হাজির হন এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অনেক দিন ধরেই মামুন দেশে আছেন। বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনেও অংশ নিচ্ছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা আসামির কাছ থেকে ফুলের মালা নেওয়ার বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর (মামুন) বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে কি না জানি না। এভাবে ওখানে আসায় তাঁকে বকাঝকা করেছি। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’
দলীয় একটি সূত্র জানায়, মামুনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মহিউদ্দিন চৌধুরী ক্ষুব্ধ। সে কারণে মহিউিদ্দনের বাসায়ও মামুনের যাতায়াত বন্ধ।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিজ দলের নেতা-কর্মী খুন, স্থানীয় দৈনিক পূর্বকোণ-এর কার্যালয়ে ঢুকে সাংবাদিকদের মারধর, পুলিশের সহকারী কমিশনার বশির হত্যাসহ গত দু্ই যুগে ২১টি মামলা হয় মামুনের বিরুদ্ধে। ২০০০ সালে তিনি ওয়ার্ড কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) নির্বাচিত হন। দলীয় চাপের কারণে ২০০১ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দুই বছর জেল খেটে ২০০৩ সালে জামিনে মুক্তি পান। ২০০৪ সালে র্যা ব গঠনের পর ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসেন।
জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার নেতা, তাই জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। নগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে সদস্য থাকলেও বর্তমানে নেই আমি। পাঁচলাইশের ওই একটি মামলা ছাড়া ২০টি মামলা খালাস ও প্রত্যাহার হয়েছে।’
সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, ‘মামলাটির স্থগিতাদেশ আনার আগে কোর্ট পরোয়ানা জারি করেছে শুনেছি। বাবা অসুস্থ থাকায় আর জামিন নেওয়া হয়নি। অবশ্যই জামিনের আবেদন করব আদালতে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই। পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা নেই। এটি প্রশাসনিক কাজ।’
আদালত সূত্র জানায়, পাঁচলাইশ থানার আবু তাহের হত্যা মামলায় একের পর এক ধার্য দিনে হাজির না হওয়ায় গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি মামুনুর রশীদের জামিন বাতিল করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। ওই দিনই পরোয়ানাটি আদালত থেকে পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন,‘ পাঁচলাইশ থানায় মামলা হলেও মামুনের ঠিকানা খুলশী হওয়ায় ওই থানায় যেতে পারে পরোয়ানা।’
খুলশী থানার ওসি মাঈনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘থানায় প্রতিদিনই আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসে। মামুনুর রশীদের নামে কোনো পরোয়ানা আছে কি না, যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
১৯৮৯ সালের ৪ এপ্রিল নগরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে যাওয়ার পথে শিবিরের কর্মী আবু তাহেরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শিবিরের আরেক কর্মী মোহাম্মদ উল্লাহবাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আসে। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র কাছে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন মামুন। মামলা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে সুপারিশ করে জেলা প্রশাসনকেও চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু গত বছরের ২২ জানুয়ারি শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করে দেন। এরপর আবারও মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে গত ২৭ জুলাই উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে আসেন মামুন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচলাইশ থানার একটি হত্যা মামলায় মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে আদালত পরোয়ানা জারি করেছিলেন। গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুলিশের।