রাতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সকালে ভোট শুরু

পাবনা-৪,(ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল নয়টায়। তবে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি একদম নেই বললেই চলে। ছিল না ভোটারের সারি। প্রায় ফাঁকা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হচ্ছেন এক বৃদ্ধা। আ. জব্বার খান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, কালীকাপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচনে আজ শনিবার সকাল নয়টায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এ উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার ১২৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। রাতেই এসব কেন্দ্রে ভোটের বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের তরফ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১২৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৮টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য এসব ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য এবং ১ হাজার ৫৪৮ জন আনসার সদস্য ও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। দায়িত্বে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একাধিক দল।

সকাল নয়টায় সরেজমিনে ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুর আব্দুল জব্বার খান স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত বলয়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে। দুই দলের সমর্থকেরা বাইরে অবস্থান করছেন। কেন্দ্র বেশ শান্ত। তবে ভোটারের উপস্থিতি কম।

এ প্রসঙ্গে জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হবে বলে আশা করছি।’

গতকাল রাত আটটার দিকে বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে এবং এর কিছুক্ষণ পরই জেলা আওয়ামী লীগ পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে দুটি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণভাবেই তাঁরা ভোটের কাজ করছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের কথা ছিল, ভোটের আগে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হবে না। কাউকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হবে না। কিন্তু সেই কথা রক্ষা করা হয়নি। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি টের পেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমরা নির্বাচনী এলাকার ১২৯ কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে এজেন্ট দিয়েছি। ভোট শুরুর আগে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজেন্টরা যদি ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারে এবং রাতে যদি কোনো নেতা-কর্মীকে হয়রানি করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্যসচিব হাসান জাফির, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ খান প্রমুখ।

বিএনপির প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই রাত নয়টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

বক্তব্যে এস এম কামাল হোসেন বিএনপির প্রার্থীর সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমরা বিএনপির প্রার্থীকে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রাখার অঙ্গীকার করেছিলাম। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখেছি। নির্বাচনী এলাকার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা মাঠে নেমে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু বিএনপি তাদের দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ভোট চাইতে পারেনি। কোনো প্রচারে অংশ নেয়নি। দলের কোনো ঊর্ধ্বতন নেতা মাঠে এসে ভোট প্রার্থনা করেননি। এখন নির্বাচনে ভরাডুবি দেখতে পেরে, পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।’

এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি সব সময় জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে। মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আবারও মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। তারা (বিএনপি) নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ভোটে অংশ নিয়েছে, জেতার জন্য নয়।

আওয়ামী লীগের এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মুর্তজা বিশ্বাস প্রমুখ।

গত ২ এপ্রিল পাবনা-৪ আসনের সাংসদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তিনজন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করছেন। ভোটে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার ১২৯টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৮২ হাজার ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত জুলাইয়ে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বগুড়া-১ আসনে ভোট পড়েছিল ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দুটি আসনে গড় ভোটের হার ৫৫ শতাংশ।