রাতে লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, সকালে বরখাস্ত

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহীতে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে ‘বরখাস্ত হওয়া একজন প্রিসাইডিংয়ের আত্মকাহিনি’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাঁকে বরখাস্ত করার কাহিনি তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাতে তাঁকে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সকালে স্বয়ং রিটার্নিং কর্মকর্তা কেন্দ্রে এসে ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ আগে তাঁকে বরখাস্ত করেন। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়াই ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। ফলাফল শিটে সই করেছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

ঘটনাটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের। গত বৃহস্পতিবার সেখানে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন গোদাগাড়ীর বলিয়াডাইং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর কবির। তাঁকে বরখাস্ত করার পর সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেসবাহ উল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে এই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. হজরত আলী সোমবার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

আরও পড়ুন

ফেসবুক স্ট্যাটাসে জাহাঙ্গীর কবির দাবি করেছেন, ভোটের আগের দিন বিকেলে তিনি ভোটকেন্দ্রে যান। রাতে অচেনা এক ব্যক্তি নির্বাচনী সুবিধাপ্রাপ্তির বিনিময়ে তাঁকে একটি লোভনীয় প্রস্তাব দেন। এ সময় সেখানে কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে ওসি সাহেবসহ রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন বলে ওই ব্যক্তি জানান। পুলিশ কর্মকর্তাও ওই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন বলে তাঁকে জানানো হয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘কে ওসি আর কে রিটার্নিং অফিসার আমি চিনি না। অবৈধ সুবিধা আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ আপসহীন।’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

পরে ওই রাতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে জানতে চান, কোনো প্রার্থী সেখানে গিয়েছিলেন কি না। উত্তরে তিনি জানান, কোনো প্রার্থী তাঁর কাছে যাননি।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সকালে উঠে যথারীতি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে আসেন। সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। তার কিছুক্ষণ আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর কাছে আসেন। তিনি তাঁকে বলেন, ‘এখানে আপনার কাজ করা লাগবে না। আপনাকে বরখাস্ত করা হলো।’ সেখানেই তিনি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেন।

বাড়ি ফিরে ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওই দিন বেলা ১টা ১৫ মিনিটে ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেন। জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, স্ট্যাটাসটি তিনি প্রত্যাহার করেননি এবং করবেনও না। কেন তাঁকে বরখাস্ত করা হলো, এ ব্যাপারে তিনি জানতে চান।

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে রাতে কেউ একজন গিয়েছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাঁকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ পেয়ে তিনি কেন্দ্রে গিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ফোন ধরেননি।