লাকিংমের মৃত্যু, ন্যায়বিচার চেয়েছে দুই আন্তর্জাতিক সংস্থা

নিহত লাকিংমে চাকমা
ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকারের কাছে লাকিংমের ন্যায়বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স নামের সংগঠন দুটি গত শনিবার এই বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে সংগঠন দুটি বলছে, লাকিংমে চাকমা ১৪ বছরের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এক কিশোরী। সে বাংলাদেশের কক্সবাজারের ‘অ-আদিবাসী’ বাঙালি দ্বারা অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে এ দুটি সংগঠন জানিয়েছে, লাকিংমেকে গত বছরের ৫ জানুয়ারি বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। সেদিন তার বয়স ছিল ১৪ বছর ১০ মাস। বাঙালি যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচজন তাঁকে অপহরণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

অপহরণের পর গত ১১ জানুয়ারি লাকিংমেকে ১৮ বছর প্রমাণের মিথ্যে জন্মসনদে জোর করে আতাউল্লাহর সঙ্গে বিয়ে পড়ানো হয় এবং তাকে ধর্মান্তরিত করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অপহরণের ১১ মাস ৬ দিন পর গত ৯ ডিসেম্বর পুলিশ লাকিংমের বাবাকে ফোন করে কক্সবাজার হাসপাতালের মর্গ থেকে তাঁর মেয়ের লাশ নিতে বলে।

আতাউল্লার মা অভিযোগ করেন, লাকিংমে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ঢাকার একটি নাগরিক কমিটি দল গত ২৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর এই ঘটনা তদন্ত করে বলে, সে আত্মহত্যা করেছে নাকি হত্যা করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ওই তদন্তকারীরা জানিয়েছে, তারা আত্মহত্যার প্ররোচনার অসংখ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, লাকিংমে মারা যাওয়ার ১৩ দিন আগে একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেয়।
উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠন দুটি জানিয়েছে, অপহরণের পর লাকিংমের বাবা টেকনাফ থানায় গিয়েছিল মামলা করতে, কিন্তু সে সময়ের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এ মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে যেতে বলেন। লাকিংমের বাবা সে অনুসারে থানায় জিডি করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সংগঠন দুটি বলছে, লাকিংমের মতো এ রকম আরও অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে গত বছর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের প্রতি সহিংসতামূলক মোট ৫৪টি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৩৫টি ঘটনা সমতলে এবং ১৯টি ঘটনা ঘটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এর মধ্যে ১৮ জন ধর্ষণের শিকার, ১৪ জনের প্রতি ধর্ষণচেষ্টা, ৩ জন গণধর্ষণের শিকার, ৫ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার, ৪ জন হত্যার শিকার এবং ২ জন নারীর ভূমি দখল করা হয়েছে।
সংগঠন দুটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কয়েকটি বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে।

বিষয়গুলো হলো অনতিবিলম্বে লাকিংমের অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা হত্যার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; লাকিংমের মৃত্যুর কারণ নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান করা ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা; ঘটনার প্রথমে পিবিআই ও প্রশাসন যে অবহেলা করেছে তার জন্য বিভাগীয় তদন্ত গ্রহণ; সনদ জালিয়াতি এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ের জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও বিয়েতে বাধ্য করার দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা; লাকিংমের মেয়ের নিরাপত্তা এবং যথাযথ ভরণপোষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; লাকিংমের পরিবারের নিরাপত্তা এবং যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া; বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং সহিংসতার সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সিডও সনদের সুপারিশ অনুযায়ী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের প্রতি সহিংসতা ও তাদের জমি দখল–সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর কার্যকর তদন্ত গ্রহণ করে দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন