শক্তিতে না পেরে মাঠ ছেড়ে দেয় বিএনপি

মজিবর রহমান সরোয়ার ও সাদিক আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি
মজিবর রহমান সরোয়ার ও সাদিক আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি
>

• আ. লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ বিজয়ী
• প্রচারেই পিছিয়ে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার
• চাপ ও ধরপাকড়ে মজিবর আরও হাল ছেড়ে দেন

জীবনে প্রথম নির্বাচনে হারলেন বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এর মধ্যে তাঁর প্রাপ্ত ভোট এবং প্রায় মাঠ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল সদর আসনে চারবারের সাংসদ। ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। শুরু থেকে তিনি মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন না। একাধিক নেতা মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ নিয়ে বিভক্ত ছিল বিএনপি

মজিবর রহমান সরোয়ারের মতো কেন্দ্রীয় নেতা ও বরিশালের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে কেন হাল ছেড়ে দিলেন, এই প্রশ্ন স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে। কেউ কেউ বলছেন, বরিশালে বিএনপির প্রার্থীর চিন্তা ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জন্য তিনি সংঘাতে যাননি। অথবা তাঁর সাংগঠনিক শক্তিও ততটা ছিল না। আবার কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের কৌশলের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেননি।

গত সোমবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়েছেন। আর বিএনপির প্রার্থী পান ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। এই সিটিতে সর্বশেষ মেয়র ছিলেন বিএনপির আহসান হাবিব কামাল। ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে দলটির ১৯ জন কাউন্সিলর ছিলেন। এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২৪ জন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী কাউন্সিলর পদে এগিয়ে আছেন। 

শুরু থেকেই পিছিয়ে
নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। শেষের দিকে সরকারি দল থেকে চাপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করলে তিনি আরও হাল ছেড়ে দেন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন। এ জন্যই ভোটের দিন সবাই একযোগে ভোট বর্জন করেন। এটাকে অনেকে সফলতা মনে করছে।

জানতে চাইলে মজিবর রহমান প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন তিনি সিটি করপোরেশনে ভোট করতে চাননি। তবে দলের সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে অনেক বড়। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ২০ থেকে ২৫ হাজার বহিরাগত ভোটের দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান করছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন সবাই নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে তো লড়াই করা যায় না।

সরোয়ারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও মূল চালিকা শক্তি ছিলেন তাঁর বাবা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। একটা জাতীয় নির্বাচন সামনে। বিএনপি অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। ফলে বিএনপির রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা আছে। এ অবস্থায় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে সরাসরি টক্কর দিতে চাননি মজিবর রহমান সরোয়ার। 

দলীয় কাউন্সিলররা পক্ষে ছিলেন না
 ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর ছিলেন ১৯ জন। এবার শুরুতে তাঁদের সবাই প্রার্থী হলেও পরে নানা কারণে তাঁদের দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তবে প্রচারণার সময় তাঁদের কাউকেই নিজ দলেন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সেভাবে ভোট চাইতে দেখা যায়নি।

সংরক্ষিত নারী আসনে মহানগর বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আয়শা তৌহিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দলবদল করে ভোটের চার দিন আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত এবার চারজন কাউন্সিলর হতে পেরেছেন।

এ ছাড়া বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে সরোয়ারের দূরত্ব তৈরি হয়। দলে আরও বেশ কিছু বিভক্তি ছিল, যা মজিবর রহমানকে আরও দুর্বল করে দেয়। 

কৌশল ও শক্তির কাছে মার
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বরিশালের আশপাশের জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের। এটিকে তারা এলাকায় প্রভাবশালী হাসনাত পরিবারকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে নেন। ফলে প্রচুর নেতা-কর্মী নিয়ে তাঁরা এসব কেন্দ্রে অবস্থান নেন। ২৭ জুলাই রাতের আগে সব বহিরাগতকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার কথা থাকলেও প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের আগেই মাঠছাড়া করা, নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্র নিজেদের নেতা-কর্মীদের দখলে রাখা আর বুথে মেয়রের ব্যালটে নৌকার ছিল নিশ্চিত করার কৌশল ছিল আওয়ামী লীগের। আর প্রশাসনের নীরবতা আওয়ামী লীগের এই কৌশলকে সফল করেছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করেন। 

 জামানত হারালেন সরোয়ার
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বাদে বাকি ছয়জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয় হচ্ছে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে যেসব প্রার্থী মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পাবেন না তাদেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সে হিসাবে আট ভাগের এক ভাগের সমান ভোটের সংখ্যা হয় ১৬ হাজার ৬৬২ দশমিক ৫ ভোট। বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট, জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন পেয়েছেন ৬৯৬ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের ওবায়দুর রহমান ৬ হাজার ৪২৩ ভোট, বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী পেয়েছেন ১ হাজার ৯১৭ ভোট, কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ২৪৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বশীর আহমেদ পেয়েছেন (হরিণ) ৮১ ভোট।

বিজয়ীকাউন্সিলর

আ.লীগ সমর্থিত ১৬ জন
বিএনপি সমর্থিত  জন
জাতীয় পার্টি  জন
স্বতন্ত্র প্রার্থী  জন
মোট কেন্দ্র ১২৩টি
গড় ভোট ৬৩%

বিদ্যুৎ না থাকায় নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রগুলোর ভোটের হার জানায়নি
৮ ওয়ার্ডের ফল স্থগিত

প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আনোয়ার হোসেন, সামছুর রহমান, লুৎফরজামান ও এম জসীম উদ্দীন, বরিশাল থেকে