সরকারের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত নয়: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

বিবিএসের হিসাব বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ।  

আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। বিবিএস ২০০৫–২০০৬ সালের ভোক্তাদের মাথায় রেখে মূল্যস্ফীতি ঠিক করে। ১৭ বছর পরে সেই মানুষদের পরিবর্তনকে তারা ধরছে না। গ্রামপর্যায়ে মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। বিবিএস ২০০৫-২০০৬ সালের ভোক্তাদের মাথায় রেখে মূল্যস্ফীতি ঠিক করে। ১৭ বছর পরে সেই মানুষদের পরিবর্তনকে তারা ধরছে না
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম

মূল্যস্ফীতির বাড়তি ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পাওয়া উচ্চ মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে এখনো আসেনি। সেই পণ্য দেশে এলে দাম আরও বাড়বে। পাশাপাশি টাকার বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন হতে থাকলে অবশ্যই আমদানি করা সুদের পণ্যের দাম বাজারে আরও বেশি হবে। মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্রীয় সূচক হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে আগামী বাজেটে এটিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অতিমারির প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৮–১৯ ছিল দেশের সর্বশেষ স্বাভাবিক অর্থবছর। কিছু ক্ষেত্র বাদ দিলে সেই অর্থবছরের অবস্থায় এখনো বাংলাদেশ ফিরে যেতে পারিনি। এ ঘাটতি নিয়েই আগামী অর্থবছরের বাজেট দিতে হচ্ছে।’
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক বলেন, এ পরিস্থিতি একধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থা নিয়েই ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাস করতে হবে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

আগামী বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, অনানুষ্ঠানিক খাত ও যুব কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে দেবপ্রিয় বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের হার কম। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে তা আরও কম। তিনি করযোগ্য আয়ের মাত্রা সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং তরুণদের এক হাজার টাকা ভাতা ও বছরে এক লাখ টাকা শিক্ষাঋণ দেওয়ার কথা বলেন। প্রান্তিক মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

জিডিপি নয়, কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে বাজেট তৈরির পরামর্শ আহ্বান জানান দেবপ্রিয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ। তিনি বলেন, একটি ব্যতিক্রমী সময়ে এবারের বাজেট উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে। তাই কর্মসংস্থান ও প্রান্তিক মানুষের ওপর জোর দিতে হবে। মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা রাখতে চাইলে মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, বাজেটের পরিকল্পনায় সামাজিক সূচকগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বছর বছর বাজেটের আকার বাড়ে, কিন্তু ক্ষুদ্র জাতিষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষের জীবনে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। সরকার মাথাপিছু আয়ের যে পরিমাণ বলে, তা এই জনগোষ্ঠীর জন্য নিষ্ঠুরতার সমান। তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানান।

কর ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গ টেনে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বাজেটে যা ধরা হয়, করপোরেট কর তার চেয়ে বেশি দিতে হয়। এটি উদ্যোক্তাদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে এবং সেবার মান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

এখনো শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যায়নি বলে উল্লেখ করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম, অ্যাডভোকেসি ও যোগাযোগের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, আলাদা শিশু অধিদপ্তর করার কথা থাকলেও তা আজও হয়নি।