সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধের ডাক ২৫ বিশিষ্ট নাগরিকের

সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার ঢাকার শাহবাগে সমাবেশে স্লোগান দেন নারীরাছবি: দীপু মালাকার

দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছেন লেখক, অধ্যাপক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষস্থানীয় ২৫ জন নাগরিক। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও জনসমাজকে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
অবিলম্বে মন্দির, পূজামণ্ডপ ও হিন্দু বসতিতে হামলায় জড়িত এবং এর পেছনের হোতাদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতেরও দাবি করেছেন বিশিষ্ট এই নাগরিকেরা। পাশাপাশি নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, সাবেক বিএমএ সভাপতি রশিদ ই মাহবুব, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন, অধ্যাপিকা মাহ্ফুজা খানম, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সেলিম জাহান, সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম, নিজেরা করির সভানেত্রী খুশী কবীর, সাবেক ইউজিসি অধাপক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাশ, অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদ সেলিম, চিকিৎসক ও খেলাঘরের নেতা লেনিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী।

বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ করলাম যে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারল না। বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘরে হামলা করে এমন এক ভীতিকর ন্যক্কারজনক পরিবেশ তৈরি করা হলো, যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে কারোর জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা করে একদল মানুষ। এর জেরে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। পুরো ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃবিতে। বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেছেন, অতীতেও দেখা গেছে, নানা সময়ে ধর্মকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হামলা ও নৈরাজ্য সৃস্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লোটা হয়েছে। সেসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই বিচারহীনতা আবার অপরাধ সংঘটিত করতে মদদ জুগিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধর্মকে অপব্যবহারের যেকোনো ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিদ্বেষী সব অপশক্তিকে প্রশ্রয় না দেওয়া, জঙ্গি ধর্মভিত্তিক শক্তির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।