হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ৯ আসামির খালাস চেয়ে আপিল

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ৯ আসামি খালাস চেয়ে আপিল করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নয়জন আসামির পক্ষে আপিল দায়ের করা হয়।

ওই মামলায় উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আসামিপক্ষ আপিল করল।

এ ছাড়া হাইকোর্টের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ৪৮টি আপিলের কথা জানিয়ে পেপারবুকসহ অন্যান্য কাগজপত্র সরবরাহ থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন।

গতকাল যে ৯ আসামি আপিল করেছেন, তাঁরা হলেন সিপাহি কামাল মোল্লা, আবদুল মোহিত, বজলুর রশীদ, মো. মনিরুজ্জামান, হাবিলদার ইউসুফ আলী, এ টি এম আনিসুজ্জামান, সুবেদার মো. শহিদুর রহমান, নায়েক সুবেদার ফজলুল করিম ও নায়েক আবু সাঈদ আলম।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতে ওই নয়জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, যা হাইকোর্টেও বহাল থাকে। এই মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে নয়জন একটি আপিল করেছেন। আপিলে পেপারবুকে পৃষ্ঠাসংখ্যা ৫৫ হাজার ৬২৩। ভলিউম সংখ্যা ১৪০। ১৪টি সেট করে আপিল সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়েছ।

গতকাল প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, পেপারবুকে পৃষ্ঠা সংখ্যা অনেক। যাঁরা আপিল করতে আগ্রহী, তাঁরা এই পেপারবুকের ব্যবহার করে যাতে তা করতে পারেন এবং তাঁদের যাতে আর কোনো পেপারবুক দিতে না হয়, সে জন্য অব্যাহতিও চাওয়া হয়েছে এই আবেদনে।

ওই আবেদন সম্পর্কে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪৮টি আপিলের কথা জানিয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। যেখান মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত মিলিয়ে আসামির সংখ্যা প্রায় ১০০। অনুমতি পাওয়ার পর তাঁদের ক্ষেত্রে আপিল করা হবে।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ জানান, পিলখানা হত্যা মামলায় ৮৩ জনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ২০টি লিভ টু আপিল করেছে। ৮৩ জনের মধ্যে হাইকোর্টে খালাস পান ৭৫ জন এবং সাজা কমে যাবজ্জীবন পান ৮ জন।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। সেদিন ঢাকার পিলখানায় (বিজিবি সদর দপ্তর) নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।

হত্যা মামলার বিচারিক আদালতে ৮৪৬ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। আর খালাস পান ২৭৮ জন।

দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া ৬৯ জনের ক্ষেত্রে পৃথক আপিল করে। পরে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন