‘হাড়ভাঙা চিকিৎসার হাটে’ অভিযান, কবিরাজ-রোগী কেউ নেই

চুয়াডাঙ্গা থেকে অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে নাটোরের লালপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে এসেছে। সম্প্রতি গ্রামের একটি ‘কবিরাজ বাড়ীর’ সামনে।
ফাইল ছবি

নাটোরের লালপুরের সেই ‘হাড়ভাঙা চিকিৎসার হাটে’ বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। অভিযানের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে আগের দিন রাত থেকেই সব কবিরাজবাড়ি থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গা ঢাকা দিয়েছেন কবিরাজেরাও। গ্রামে পুলিশের টহল বসানো হয়েছে। নতুন রোগীদের রাস্তা থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

৪ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘গ্রামটি এখন হাড়ভাঙা চিকিৎসার হাট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘কবিরাজের বাড়িতে ২০ শয্যার হাসপাতাল’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ১০ বছর পরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়ি বাড়ি কবিরাজবাড়ির সাইনবোর্ড ঝুলছে। গ্রামের যাঁরা দিনমজুরি করতেন, তাঁরাও এই ‘চিকিৎসাবিদ্যা’ রপ্ত করে গ্রামে ও গ্রামের বাইরে গিয়ে রোগী দেখেন।

প্রথম আলোর এবারের প্রতিবেদনের পর প্রশাসনের টনক নড়ে। গত বৃহস্পতিবার নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক, জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল আজিজ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা লালপুরের ইসলামপুর গ্রামে অভিযানে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা প্রত্যেক কবিরাজের বাড়িতে যান।

লালপুর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, তাঁরা কোনো কবিরাজের বাড়িতেই রোগী পাননি, কোনো বাড়িতে কবিরাজকেও পাননি। বিকেলের দিকে তাঁরা অভিযান শেষ করে গ্রাম থেকে চলে আসেন। তবে আট সদস্যের পুলিশের একটি টহল দল পাহারায় রেখে আসা হয়। তারা ইসলামপুর গ্রামে কোনো হাড়ভাঙা রোগীকে ঢুকতে দেয়নি।

বাইরে থেকে যেসব রোগী গাড়িতে করে ওই গ্রামে চিকিৎসার জন্য আসছিল, তাদের রাস্তা থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

নাটোরের লালপুর উপজেলার ইসলামপুরে ‘কবিরাজ বাড়ী’
ফাইল ছবি

প্রতিবেদন করার জন্য ওই গ্রামে গিয়ে যে কবিরাজবাড়ির সামনে চুয়াডাঙ্গার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গিয়েছিল, সেই কবিরাজের নাম মকবুল হোসেন। তিনি গ্রামের প্রথম কবিরাজ আবুল হোসেনের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি গ্রামে নেই। চিকিৎসার জন্য দয়ারামপুরে ডাক্তারের কাছে এসেছেন। গ্রামে পুলিশ যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছেন পুলিশ গেছে। তাঁর বাড়িতে কোনো রোগী নেই। তিনি আর চিকিৎসা করবেন না বলে জানান। রোগীরা কোথায় গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝামেলা হবে এ জন্য আগের দিনই সব রোগীকে বিদায় করে দিয়েছেন। ঝামেলা হবে এটা কীভাবে জানলেন, জানতে চাইলে তিনি খানিকটা সময় নিয়ে বলেন, ওই সাংবাদিক আসার পর থেকেই তিনি ধারণা করেছিলেন যে ঝামেলা হবে। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর কবিরাজি চিকিৎসা করবেন না।

বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে ‘কবিরাজ বাড়ী’ লেখা সাইনবোর্ড।
ফাইল ছবি

অভিযান থেকে ফেরার পরে নাটোরের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান বলেন, তাঁদের অভিযানের বিষয়টি কোনোভাবে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য তাঁরা গিয়ে কারও বাড়িতে কোনো রোগী পাননি। কোনো কবিরাজকেও পাননি। কোনো বাড়িতে সাইনবোর্ডও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, তাঁরা গ্রামের মানুষকে বুঝিয়েছেন, যাতে তারা এই অপচিকিৎসায় আর না জড়ায়। কাউকে যেন উৎসাহিত না করে। এই চিকিৎসার খারাপ দিকগুলোও তাদের বোঝানো হয়েছে। একসময় যখন কিছু করার থাকে না, তখন হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে রোগী নিয়ে যেতেই হয়। এটা ভালো নয়। তিনি বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয় ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা আবার ওই গ্রামে যাবেন। ধরতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার গেলে কেউ টের পাবে না।

আরও পড়ুন