করের টাকায় অনিয়মের দায় মেটাচ্ছে সরকার
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পুনর্ভরণ করছে সরকার। তবে তার আগে ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের পুনর্গঠন বা সংস্কারকাজ করা হচ্ছে না। বরং শিগগিরই রাষ্ট্র খাতের চার বাণিজ্যিক ব্যাংককে সরকার চার হাজার ১০০ কোটি টাকা দিতে যাচ্ছে।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও চার ব্যাংকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জি।
বছরের পর বছর এই ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম ও রাজনৈতিক নির্দেশিত ঋণ বিতরণ চলেছে। গত দুই বছরে হল-মার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বড় বড় সব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশন ঘাটতি। এসব কারণে বেড়েছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ। যাতে ব্যাংকগুলোর মূলধনে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার এই অর্থ দিতে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সেই অর্থ থেকে ৯০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুনঃ অর্থায়ন তহবিল হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দফায় বাকি চার হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে চার ব্যাংককে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একাই পাবে দুই হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক এক হাজার ১০০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৮০০ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংক পাবে ২০০ কোটি টাকা।
ব্যাসেল-২ সুপারিশ অনুসারে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে চার ব্যাংক আট হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে চার হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক দুই হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭০ কোটি টাকা।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থের অপচয় রোধে চার ব্যাংককে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোকে যে অর্থ দেওয়া হবে, তা কেবল ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয়করণ (অটোমেশন) কার্যক্রমে ব্যয় করা যাবে যা ব্যাংককে আধুনিকায়ন করবে। অন্য কোনো ধরনের কাজে ব্যয় করা যাবে না।