দুর্ঘটনা এড়াতে দরকার ভালো মানের তার

এলিফ্যান্ট রোডে নতুন বাড়ি বানাচ্ছেন মো. মহসিন। সবকিছু ঠিকঠাক হলেও সমস্যা হয়েছে বিদ্যুতের তার নিয়ে। খুব একটা বোঝেন না বলে, তার বাছাইয়ের ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন ইলেকট্রিশিয়ানদের ওপর। তাতেই ঝামেলা বেধেছে। নিম্নমানের তার ব্যবহার করায় কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটে শর্টসার্কিট। বড় দুর্ঘটনা না হলেও বদলাতে হয়েছে বাড়ির বিভিন্ন অংশের তার।
বাজারে অনেক কোম্পানির তার আছে। কারওয়ান বাজারের এক ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিবিএস, বিআরবি, বিজলি, ট্রান্সটেক, সুপারস্টার, প্যারাডাইজসহ নানা কোম্পানির বৈদ্যুতিক তার বাজারে আছে। কোম্পানিভেদে তারের দামেরও কিছু রকমফের হয়। সাধারণত ভালো মানের তারের দাম কিছুটা বেশি হয়।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ভালো মানের ১ নম্বর তার ব্যবহার করতে হবে। যেন তারে বিদ্যুতের ওভারলোড না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তার কেনার ক্ষেত্রে সব সময় তাপমাত্রা বুঝে নিতে হবে। এ ব্যাপারে ক্রেতারা এখনো সচেতন নয় বলে মনে করেন মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ। তিনি বলেন, তারের গায়ে সেটি কতটুকু তাপসহ তা লেখা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট তাপমাত্রার তার কিনতে হবে। অনেকে না বুঝেই কম তাপ সহ্য করতে পারে, এমন তার বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহে ব্যবহার করে। এতে করে তারে আগুন ধরে যায়। এটিই দুর্ঘটনা ঘটার অন্যতম কারণ।
অ্যাকর্ডে ফায়ার সেফটি ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ টিপু বলেন, আগুন লাগার ঘটনার মধ্যে ৮০ শতাংশই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে হয়ে থাকে। এ থেকেই তারের গুরুত্ব বোঝা যায়। নিম্নমানের তার ব্যবহার করলে তা বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারে না। তারের পেছনে সবাই কম খরচ করতে চায়। কিন্তু বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তারই বেশির ভাগ সময় দায়ী থাকে। মানসম্পন্ন তার ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তার বাছাইয়ের প্রতি জোর দেন এম এ রশিদ টিপু। তিনি বলেন, আগুন প্রতিরোধক তার ব্যবহার করা ভালো।
বিবিএস কেব্লসের পরিচালক বদরুল হাসান জানান, তাঁদের কোম্পানি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ীই তার প্রস্তুত করে থাকে। তিনি বলেন, বাসাবাড়ি, কলকারখানা ও সরকারিভাবে বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা মানের তার তৈরি করা হয়। শিল্প খাতের উপযোগী করে ভিন্ন মানের তার তৈরি করে বিবিএস কেব্লস। তা ছাড়া ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ীও তার তৈরি করা হয়। সে ক্ষেত্রে ক্রেতার চাহিদার ওপর নির্ভর করে তারের বিদ্যুৎ ধারণের ক্ষমতা।
বাজারে আছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিজলী কেব্লস। এর রয়েছে কপার ও অ্যালুমিনিয়ামের ডমিস্টিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল (৩৩ কেভি পর্যন্ত) ও সুপার এনামেল কেব্লস। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ভোক্তাদের প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ভালো মানের পণ্য দেওয়ার লক্ষ্যে বিজলী কেব্লস বাজারে এসেছে। স্পেক্ট্রোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে এর কপারের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়। তিনি জানান, বাজারে ডমিস্টিক কেব্লসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ডমিস্টিক কেব্লস কয়েলপ্রতি দাম ৭৫০-১৭০০০ টাকা। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেব্লস মিটারপ্রতি দাম ৩০০-২০০০০ টাকা।