২৫ নয়, সিআইপি কার্ড পাবেন ৯০ প্রবাসী

দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরও বেশি সংখ্যায় সিআইপি (কমার্শিয়াল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন বা বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) কার্ড দেওয়ার নতুন নীতিমালা করেছে সরকার। ফলে এখন থেকে প্রতিবছর তিন শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৯০ প্রবাসী সিআইপি কার্ড পাবেন। আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫।
নতুন নীতিমালাটি ৪ মে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (অনাবাসী বাংলাদেশি) নির্বাচন নীতিমালা, ২০১৫’ শীর্ষক এ নীতিমালায় সিআইপির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগ্যতায়ও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সে অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী শ্রেণিতে সিআইপি হতে ন্যূনতম দুই লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠাতে হবে। এত দিন এই পরিমাণ ছিল দেড় লাখ ডলার।
শিল্প খাতে বিনিয়োগকারী শ্রেণিতে সিআইপি হতে হলে শিল্প খাতে মূলধন হিসেবে তিন লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ থাকতে হবে; যা আগে ছিল পাঁচ লাখ ডলার।
অন্যদিকে আমদানিকারক শ্রেণিতে সিআইপি হতে বছরে ন্যূনতম তিন লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার বাংলাদেশি পণ্য আমদানি (বিদেশে) করতে হবে। এই শ্রেণিতে আগে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানির প্রয়োজন হতো।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই সিআইপি কার্ড দিয়ে থাকে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ২০, বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৫০ ও বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক শ্রেণিতে ২০ জন প্রবাসী সিআইপি কার্ড পাবেন। এত দিন ২০০৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী প্রবাসীদের সিআইপি কার্ড দিয়ে আসছিল মন্ত্রণালয়। তাতে তিন শ্রেণিতে সিআইপির সংখ্যা ছিল যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১০, ১০ ও ৫ জন।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হজরত আলী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতেই নীতিমালাটি পরিবর্তন করা হয়েছে। তা ছাড়া আগেরটি অনেক পুরোনো হয়ে গিয়েছিল। আশা করছি, প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে অধিক হারে দেশে বিনিয়োগ করবেন, রেমিট্যান্স পাঠাবেন ও দেশের পণ্য আমদানি করবেন।’ তিনি জানান, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ২০১৬ সাল থেকে প্রবাসীদের সিআইপি কার্ড দেওয়া হবে।
সিআইপি কার্ডের জন্য নির্বাচিত প্রবাসীরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সরকার অনুমোদিত পরিচয়পত্র পাবেন। এক বছর মেয়াদি এই পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পাবেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক; বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে আমন্ত্রণ; ব্যবসাসংক্রান্ত ভ্রমণে বিমান, রেল, সড়ক ও জলযানে আসন সংরক্ষণ এবং স্ত্রী-সন্তান ও নিজের চিকিৎসায় হাসপাতালে কেবিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ এবং বিশেষ হ্যান্ডেলিংয়ের সুবিধাও পাবেন তাঁরা।
তবে ঋণখেলাপি হলে, বৈদেশিক ক্রেতার সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধে জড়ালে, আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে ও ভুল তথ্য দিলে প্রবাসীরা সিআইপি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
নতুন নীতিমালায় সিআইপি নির্বাচনে পাঁচ সদস্যের একটি প্রাথমিক ও নয় সদস্যের একটি চূড়ান্ত বাছাই কমিটি রাখা হয়েছে।
তবে সিআইপি নির্বাচনের একটি সূচি আগের মতোই রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রতিবছরের আগস্ট মাসে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচিত সিআইপির তালিকা ১৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। পরে সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।