‘অতিরিক্ত খরচ ভোক্তার ওপর গিয়েই পড়বে’

মো. কহিনুর ইসলাম

সম্প্রতি সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি চলছে এগুলোর সংকট। এসব সমস্যার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মুন্সিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. কহিনুর ইসলাম।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই পুরো দেশে বিদ্যুৎ আর গ্যাসের সংকট চলছিল। আপনার এলাকায় এ সংকট কতটা প্রকট?

কহিনুর ইসলাম: সারা দেশের মতোই আমাদের এখানকার সংকটের চিত্র। অবস্থার আরও উন্নতি হওয়া উচিত ছিল। সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াল, এখন যদি জোগানও কম থাকে, তাহলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একদিকে যেমন বেশি খরচ করতে হবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে উৎপাদনও ব্যাহত হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্পে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন?

কহিনুর ইসলাম: মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের তুলনায় বিদ্যুৎনির্ভর শিল্পের সংখ্যাই বেশি। গ্যাস ও বিদ্যুৎ—দুটির দামই বেড়েছে, যা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়বে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কোন ধরনের শিল্প ও ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

কহিনুর ইসলাম: সব ধরনের শিল্প ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পণ্যের দাম বাড়বে। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন ভোক্তারা।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মী ছাঁটাই কি করতে হবে? তেমন কোনো আশঙ্কা কি আপনি করেন?

কহিনুর ইসলাম: কর্মী ছাঁটাই বা শিল্প ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা এখনো এ দেশে তৈরি হয়নি। শিল্প বন্ধ হবে না। কারণ, উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দামও বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যে বেড়েও গেছে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ ভোক্তার ওপরে গিয়েই পড়বে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিদ্যুৎ আর গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে দাম বেড়েছিল জ্বালানি তেলের। এগুলোর দাম বাড়ানো হলো এমন সময়ে যখন শিল্পের মালিকেরা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। এর বাইরে রয়েছে ডলার-সংকট, ব্যাংকের সমস্যা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনারা মনে করছেন?

কহিনুর ইসলাম: করোনার ওপর কারও হাত ছিল না। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। বাংলাদেশেও পড়েছে। জ্বালানি তেলসহ অনেক খাদ্যপণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বেশি ডলার খরচ করতে হচ্ছে। ফলে ডলার-সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সব সংকট কাটিয়ে এ দেশের শিল্প এগিয়ে যাবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে ব্যবসার ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, সেই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসতে আপনারা নিজেরা কী করতে পারেন? আর এ ক্ষেত্রে সরকারের কী করার আছে? কী প্রত্যাশা আপনার?

কহিনুর ইসলাম: সরকারের একার কিছু করার নেই। যদি থাকত, তাহলে দাম না বাড়িয়ে সরকার সব পণ্যে ভর্তুকি দিত। সরকারের সেই সামর্থ্য নেই, তাই দাম বাড়িয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সব ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, শিল্পমালিক ও দেশের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।