ভারত ডিজেল রপ্তানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করেছে
ডিজেল রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত। এত দিন প্রতি লিটার ডিজেল রপ্তানির ক্ষেত্রে দশমিক ৫ রুপি শুল্ক দিতে হতো। এখন থেকে প্রতি লিটারে ১ রুপি শুল্ক দিতে হবে। ফলে যেসব দেশ ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করে, তাদের আমদানি ব্যয় আগের তুলনায় বাড়তে পারে। ভারতের ‘ইকোনমিক টাইমস’ এ খবর দিয়েছে।
রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোর নতুন এ সিদ্ধান্ত ২১ মার্চ, অর্থাৎ আজ থেকে কার্যকর হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে নিয়মিত ডিজেল আনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ২০১৭ সাল থেকে ওয়াগনে করে আসতো এ তেল। তবে এখন নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন। তবে ডিজেল রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়ার কারণে তাতে বাংলাদেশের আমদানির ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা জানার জন্য বিপিসির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ডিজেলে রপ্তানি শুল্ক বাড়ালেও দেশটির অভ্যন্তরীণ অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উৎপাদনের ওপর ধার্য করা ‘উইন্ডফল’ করের পরিমাণ কমিয়েছে ভারত। এত দিন প্রতি টন পেট্রোলিয়াম উৎপাদনে ৪ হাজার ৪০০ রুপি শুল্ক দিতে হতো, সেখান থেকে তা কমিয়ে সাড়ে তিন হাজার রুপি করা হয়েছে। সাধারণত অতিরিক্ত মুনাফার ওপর উইন্ডফল কর আরোপ করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম অনুসরণ করে পাক্ষিক ভিত্তিতে শুল্কহার হালনাগাদ করে ভারত।
এর আগে ৪ মার্চ স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত অপরিশোধিত তেলের ওপর উইন্ডফল কর টনপ্রতি ৪ হাজার ৩৫০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৪০০ রুপি করেছিল ভারত সরকার। তবে সে সময় ডিজেলের রপ্তানি শুল্ক প্রতি লিটারে কমিয়ে দশমিক ৫ রুপি করা হয়। গতকাল সোমবার সেই সিদ্ধান্তে আবার পরিবর্তন আনা হলো, যা আজ থেকে কার্যকর হয়েছে।
এদিকে ডিজেলের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হলেও পেট্রল ও এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েল বা এটিএফ রপ্তানিতে শুল্ক অব্যাহতি বহাল রেখেছে ভারত।
ডিজেল–পেট্রল রপ্তানিতে বিধিনিষেধের সময় বাড়তে পারে
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ইকোনমিক টাইমসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী এপ্রিল মাস থেকে ডিজেল ও পেট্রল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরও বাড়াতে পারে ভারত। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পরিশোধিত জ্বালানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেবে দেশটি।
চলতি মাসে ভারতের ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হচ্ছে। পরের অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ এপ্রিল মাস থেকেই ডিজেল ও পেট্রল রপ্তানিতে চলমান বিধিনিষেধ বাড়াতে পারে ভারত।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয় ইউরোপের অনেক দেশ। বিপরীতে ইউরোপে গ্রাহক হারিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে অন্যান্য দেশের কাছে জ্বালানি বিক্রি করছিল রাশিয়া। ভারতের অনেক বেসরকারি কোম্পানি সুযোগটি নেয়।
এসব কোম্পানি রাশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি কিনে তা আবার ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে বেশ মুনাফা করছিল। ভারতের জ্বালানি–রপ্তানির বিধিনিষেধ বাড়ানো হলে তা দেশটির এসব বেসরকারি পরিশোধন কোম্পানিকে রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয়ে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ ভারত। অর্থাৎ দেশটির অভ্যন্তরেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার অনেক বেশি। এ অবস্থায় বাড়তি মুনাফার জন্য বেশি পরিমাণে জ্বালানি রপ্তানি হলে তা দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদায় সংকট তৈরি করতে পারে।
এ কারণে গত বছরের জুন থেকে পরিশোধিত জ্বালানি রপ্তানির মুনাফার ওপর একটি উইন্ডফল কর আরোপ করে ভারত। একই সঙ্গে নিয়ম করেছে কোম্পানিগুলো তাদের পেট্রল রপ্তানির ৫০ শতাংশ ও ডিজেল রপ্তানির ৩০ শতাংশের সমপরিমাণ জ্বালানি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা। এখন নতুন অর্থবছরেও এই বিধিনিষেধ বাড়ানোর কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি কেনায় ইতিমধ্যে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছে ভারত। দেশটিতে বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ২৮ শতাংশই আসছে রাশিয়া থেকে, যা ২০২১ সালে ১ শতাংশেরও কম ছিল।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়া থেকে ভারতের পরিশোধিত জ্বালানি আমদানিও রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে, যদিও এর বেশির ভাগই জ্বালানি তেল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া থেকে শিগগিরই পরিশোধিত পেট্রল ও ডিজেলও আমদানি শুরু করবে ভারতের কোম্পানিগুলো।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি করে আসছে। তবে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশটি পশ্চিমা দেশগুলোয় তাদের রপ্তানি বাজার সরিয়ে নিয়েছে। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে জ্বালানি রপ্তানি করে তারা বেশি মুনাফা পাচ্ছিল।
অন্যদিকে ভারত যে পরিমাণে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে, তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে রাশিয়া থেকে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোয়। তারা বলছে, ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে যেভাবে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি যাচ্ছে, তাতে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।