প্রতি প্রান্তিকে সাধারণ সুদ আয়ের সঙ্গে ঋণমান ভালোভাবে যাচাই না হওয়ায় মুনাফা বেড়েছে
ভালো পরিচালন মুনাফা হয়েছে ব্যাংক খাতে
আজ নতুন বছরের শুরু। বিদায় নেওয়া ২০১৪ সালে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ভালোই পরিচালন মুনাফা করেছে।
হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা ধরনের ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকগুলোতে গত বছর ঋণ বিতরণে কিছুটা কড়াকড়ি ছিল। তার ওপর বছরজুড়ে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগে মন্দা চলেছে। যদিও একেবারে শেষ ভাগে এসে কিছুটা বিনিয়োগ বাড়ছে এমন ইঙ্গিত মিলেছে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে।
তবে সামগ্রিকভবে ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে। ফলে তার একটা সাধারণ সুদ আয় প্রতি প্রান্তিকে যোগ হয়েছে। যদি এসব ঋণের গুণগতমান সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা হতো, তাহলে মুনাফার ওপর প্রভাব পড়ত বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ হওয়ায় এটি সবার নজরে আসে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণ কমানোর চাপ ছিল। সূত্রগুলো বলছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঋণের গুণগতমান যাচাইটা ভালো হয়নি এবার। এতে মুনাফা বৃদ্ধি হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর একটা সাধারণ সুদ আয় প্রতি প্রান্তিকে যোগ হয়। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি না থাকলেও এসব খাতে ব্যাংকের আয় কিন্তু হয়েছে। আবার অবকাঠামো খাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য গ্যারান্টি দিতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। সে ক্ষেত্রেও কিছু আয় এসেছে।’
তবে বেসরকারি খাতে বিদেশ থেকে ঋণ আনার বিধান (বায়ার্স ক্রেডিট ও ইক্যুইটি) ব্যাংকের অর্থ খাটানোর সুযোগকে সীমিত করেছে বছরজুড়ে। ফলে অতিরিক্ত তারল্য বছর ধরেই ব্যাংকগুলোতে ছিল।
সামগ্রিক আমদানি কমেছে। বছরজুড়ে শেয়ারবাজারেও মন্দা থেকেছে। সেই মন্দায় ব্যাংকের বিনিয়োগও আটকে ছিল। যদিও এর বিপরীতে নিরাপত্তা সংরক্ষণ (প্রতিশনিং) এবার কম লেগেছে। ফলে এ ক্ষেত্রে মুনাফা না এলেও আগের বছরগুলোর মতো প্রভিশনিং করতে হয়নি।
মুদ্রাবাজারে টাকার প্রবাহ প্রায় সারা বছরই বেশি ছিল। ফলে কলমানির সুদের হারে আয় হয়নি তেমন। তবে বছরের শেষ সময়ে টাকার চাহিদা একটু বৃদ্ধি হওয়ায় কলমানির সুদের হার কিছুটা বেড়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের কতকগুলো খাতে সমস্যা হচ্ছে। আবাসন খাতের বেচাবিক্রি কমে গেছে। বেশকিছু ঋণগ্রহীতা ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ করেছিল বড় মুনাফার আশায়। এখন বেচাবিক্রি না হওয়াতে ব্যাংকের টাকাও ফেরত আসছে না। এসব খাত থেকেও আয় যোগ হয়নি এবার। তবে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ভালো আয় হয়েছে ব্যাংকগুলোর। সরকারের গ্যারান্টিতেও আয় হয়েছে ব্যাংক খাতের। বলা চলে এটি ব্যাংকগুলোর বড় আয়ের জোগান দিয়েছে। আর এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর অপসর ব্যাংকিং ইউনিটের বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় যোগ করেছে মুনাফায়।
শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ বিতরণে কিছুটা মন্দা থাকলেও কমিশন ও মাশুল আয় তা পুষিয়ে দিয়েছে বলে ব্যাংক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
তবে বছরের শেষ সময়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো মূল্যে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ তৈরি করে। বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের উদ্যোগীও হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েকজন ব্যাংকার বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের সংকেতে কোনো কোনো ব্যাংক সুযোগ নিয়েছে। ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কায় আগেই নবায়ন দেখিয়েছে ব্যাংকগুলো যা মুনাফাকে স্ফীত করতে সহায়ক হয়েছে।
পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। পরিচালনগত মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং কর (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফার পরিমাণ হয়।
এর ওপরও ব্যাংকবিশেষে সাধারণ রিজার্ভ খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীকে অপেক্ষা করতে হবে নিট বা প্রকৃত মুনাফার হিসাব পাওয়া পর্যন্ত। আবার অনেক ক্ষেত্রেই নিট মুনাফা হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ লভ্যাংশ আকারে বিতরণ করা হবে না। যার কারণে শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পাওয়ার হিসাব কষতে অপেক্ষা করতে হবে ব্যাংকের এজিএমের আগের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। উপরন্তু, সংবাদপত্রের মুনাফার তথ্য প্রাপ্তিতে নানা বাধা রয়েছে। ফলে এমনও হতে পারে যে কোনো ব্যাংক সূত্র একটি কাছাকাছি অঙ্কের মুনাফার তথ্য দিয়েছে। এটাকে প্রাথমিক তথ্য বিবেচনা করা যায়।
বিশ্বব্যাপী পরিচালন মুনাফা প্রকাশ একটি স্বীকৃত বিষয়। যদিও বাংলাদেশে এই পরিচালন মুনাফা প্রকাশে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এই বিধিনিষেধ এসেছে বিএসইসির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তবে শেয়ারবাজারে যাঁরা প্রতিনিয়ত কেনাবেচা করেন এবং যাঁদের কোনো ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁরা ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমেই এ তথ্য পান।
২০১৪ সালের আর্থিক চিত্র (কোটি টাকায়)
২০১৪ ২০১৩
ইসলামী ব্যাংক ১৭২৫ ১৬০০
এবি ব্যাংক ৯০০ ...
প্রাইম ব্যাংক ৭১০ ৮৫০
পূবালী ব্যাংক ৮০০ ৮১৫
ন্যাশনাল ব্যাংক ৮১১ ৬৫০
সাউথইষ্ট ব্যাংক ৮৩২ ৬৮৫
ব্র্যাক ব্যাংক ৬৮০ ...
এক্সিম ব্যাংক ৬২৫ ৫৫৮
ইউসিবিএল ৮৮৫ ৭১১
এনসিসিবিএল ৩৮৬ ৪০৩
শাহাজালাল ২৫০ ৩০০
ব্যাংক এশিয়া ৫৮০ ৫৫০
মার্কেন্টাইল ৪৫০ ৪২৫
আইএফআইসি ৪০২ ৪০৩
আল-আরাফাহ ৬৪৫ ৪৭০
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৪১৫ ...
দি ট্রাস্ট ব্যাংক ৩৮৫ ২২৩
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ২৮০ ২১১
ওয়ান ব্যাংক ৩৮৮ ...
যমুনা ব্যাংক ৪২৮ ...
এসআইবিএল ৪৫০ ৩২৫
ফার্স্ট সিকিউরিটি ২২১ ২০১
ইউনিয়ন ব্যাংক ৪২ ২৫
সাউথ বাংলা ৩২ ১৪
মধুমতি ৫১ ১০
ফারমার্স ১৪ ৪
মেঘনা ১৭ ৬
এনআরবি কমার্শিয়াল ৩৩ ১০
এনআরবি লি. ১.৫০ ২
এরআরবি গ্লোবাল ৫ ...
মিডল্যান্ড ১৭ ...
জনতা ব্যাংক ১১০০ ১৪৮৫
রূপালী ব্যাংক ৩০০ ৩১০
বিডিবিএল ১৭৫ ২৪৮
বেসিক ব্যাংক (-) ৯৮.৩৯ ১৭৮