বাংলাদেশ বলতে এখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম, এর বাইরে যেন কিছু নেই

৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কী প্রত্যাশা করেন, তা নিয়ে চেম্বার নেতাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে প্রথম আলো। তৃতীয় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক তাহমিন আহমেদের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতীক বর্ধন।

প্রথম আলো:

বাজেটে আপনাদের দাবির কতটা প্রতিফলিত হয়?

তাহমিন আহমেদ: প্রতিবছরই আমরা বাজেটের আগে বিভিন্ন প্রস্তাব দিই; কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখে না বললেই চলে। অতীতে আমরা পর্যটন খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি; কিন্তু দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই।

প্রথম আলো:

সিলেটের অর্থনীতির মূল খাতগুলো কী কী?

তাহমিন আহমেদ: পুরো সিলেটের অর্থনীতি পর্যটন, প্রবাসী আয় ও কৃষির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এর বাইরে কিছু নেই বললেই চলে, শিল্প তো নেই-ই। পর্যটন সিলেটের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হলেও রেল–যোগাযোগের উন্নতি হয় না; এখন রেলপথে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সিলেটের ট্রেনগুলোকে প্রায় সব জায়গায় ক্রসিং দিতে হয়; আমরা এক্সপ্রেস ট্রেন বা সরাসরি ট্রেনের কথা বলেছি। এই ট্রেনের বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সেই ট্রেন আর আসেনি। সামগ্রিকভাবে সিলেট অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। ওদিকে পদ্মা সেতু হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য এখন মোংলার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সিলেট কিন্তু আরও তিমিরে চলে যাচ্ছে।

প্রথম আলো:

বাজেটে আপনারা সিলেটের জন্য কী চান?

তাহমিন আহমেদ: সিলেট জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রবাসে থাকেন; অনেক মানুষ প্রবাসে যেতে চান। এসব মানুষ কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিদেশে ভালো উপার্জন করতে পারবেন; সে জন্য সিলেটে কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এখানকার শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো গতিশীল করা; পর্যটন ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ ও সামগ্রিকভাবে সিলেট জেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

প্রথম আলো:

বিভিন্ন জেলার চেম্বার নেতারা অভিযোগ করেছেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে জেলাগুলো পিছিয়ে আছে। সিলেট জেলার কী অবস্থা?

তাহমিন আহমেদ: এই বাস্তবতা সবখানেই। একটিই পার্থক্য, সেটি হলো আমানতের দিক থেকে সিলেট বাংলাদেশের তৃতীয় শীর্ষ জেলা হলেও ঋণপ্রাপ্তিতে অন্যান্য বড় শহরের মতোই পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের ঋণের বড় অংশ চলে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে; বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ বলতে এখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম হয়ে গেছে। অন্যান্য জেলা এভাবে পিছিয়ে থাকলে সরকার যে স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন।

প্রথম আলো:

সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে সমস্যার সমাধান পান?

তাহমিন আহমেদ: মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কথা বলে লাভ হয় না। কোনো অভাব-অভিযোগের কথা বলতে গেলে তাঁরা মনে করেন, আমরা বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি। দেখা যায়, সব সিদ্ধান্ত এখন আমলারাই নেন।

প্রথম আলো:

সিলেটে কয়েক বছর ধরে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। এসব দুর্যোগ কীভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে?

তাহমিন আহমেদ: পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৮ সালের পর বন্যা হয় ২০০৪ সালে। তারপর ধারাবাহিকভাবে ২০ বছরের মধ্যে ২০১০, ২০১৭, ২০২০, ২০২২ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের বন্যাসহ ছোট–বড় ৯টি প্রাকৃতিকে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে সিলেটকে।
এখন বন্যার কারণ হিসেবে প্রথমত যা দায়ী, তা হচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের বেহাল নদ–নদী। দখল–দূষণে জর্জরিত এখন সব নদী। অপরিকল্পিত আবাসন ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে অবৈধ দখলের কারণেই ভরাট হচ্ছে নদী, অপরিকল্পিত ড্রেজিংসহ আবর্জনার ভাগাড়ের জন্য আজ এমন দশা। এ ছাড়া হাওরের খাল ও নালা ভরাট, পুকুর–জলাশয় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে সিলেট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
শহরেও পানি উঠছে; মানুষের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করছে সেই পানি। বিষয়টি হলো, সরকার গ্রামাঞ্চলে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেয়; কিন্তু সিলেট শহরে যে এখন বন্যা হচ্ছে, পানিতে মানুষের বাড়িঘরের ক্ষতি হচ্ছে, সেই ক্ষতিপূরণ কেউ দিচ্ছে না।
প্রতিবছর বন্যা হলেই বন্যানিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ দেওয়া হয়; কিন্তু এটা সমাধান নয়। দেখা যায়, বন্যা নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো একেক সময় একেক কথা বলে। অনেকে বলেন, বন্যা হওয়া ভালো, এতে যে পলিমাটি আসে, তাতে মাটি উর্বর হয়। কিন্তু দেখা যায়, এই বন্যার সঙ্গে নুড়িপাথর ও মেঘালয়ের খনির বর্জ্য পর্যন্ত ভেসে আসে; এগুলোতে যে মাটির উর্বরতা শক্তি হয় না, সেটি বোঝা দরকার। শুধু সিলেট শহর নয়, পুরো এ অঞ্চলের অবস্থা একই রকম।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা যেমন লুটপাট হয়, তেমনি সমন্বিত ও বৈজ্ঞানিকভাবেও এই বরাদ্দ ব্যবহার করা হয় না। আমাদের দাবি হলো, বন্যা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সমস্যার সমাধান করা।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ

তাহমিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।