চামড়ার দাম বাড়ায় কেনাবেচায় উৎসাহী হবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে ভালো বেচাকেনার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

প্রথম আলো:

চলতি বছর কী পরিমাণে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন?

আফতাব খান: পোস্তার ব্যবসায়ীরা গত বছর সব মিলিয়ে দেড় লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়েছিলেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া এবার সংগ্রহ করা যাবে। এর মধ্যে শুধু পোস্তা এলাকায় ৬০-৮০ হাজার এবং অন্যান্য স্থান থেকে বাকি চামড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

প্রথম আলো:

চামড়ায় লবণ দিতে কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন?

আফতাব খান: আমরা ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পোস্তায় ৩৭টি আড়ত রয়েছে। পোস্তা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। পোস্তার আড়তগুলো ধুয়েমুছে তৈরি করা হয়েছে। চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় লবণও কেনা হয়েছে।

প্রথম আলো:

চলতি বছর লবণের দাম ও মজুরির কী অবস্থা?

আফতাব খান: গত বছর কোরবানির সময়ের তুলনায় এবার লবণের দাম কম। গত বছর এ সময় বড় দানার লবণের (৭৪ কেজির বস্তা) দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। এ বছর সেই বস্তার দাম হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। তবে চামড়ায় লবণ দেওয়া শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। প্রতিটি চামড়ায় লবণ দিতে ৮৫-১০০ টাকা মজুরি চাচ্ছেন কারিগরেরা। গত বছর এই মজুরি ছিল ৭০-৭৫ টাকা।

প্রথম আলো:

পোস্তার বাইরে আর কোথায় আড়ত এবং চামড়ায় লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে?

আফতাব খান: কোরবানি ঈদের দিন সারা দেশেই ব্যবসায়ী-আড়তদারেরা চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দেন। রাজধানীতে পোস্তা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান যেমন, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, বেড়িবাঁধ, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। ঢাকার বাইরে নাটোর জেলায় অর্ধশত আড়ত আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও যশোরেও বড় পরিসরে চামড়া সংগ্রহ ও লবণ দেওয়া হয়।

প্রথম আলো:

এ বছর লবণ দেওয়া চামড়ার দাম বাড়িয়েছে সরকার। বাড়তি দাম কেমন মনে হচ্ছে?

আফতাব খান: গত বছরের চেয়ে এবার লবণ দেওয়া চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচায় উৎসাহ পাবেন। এতে চামড়া নষ্টের পরিমাণও কমবে।

প্রথম আলো:

চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা আছে কি?

আফতাব খান: সাভারে চামড়া শিল্পনগরে ১৫৪টি ট্যানারি আছে। এ ছাড়া দেশের মধ্যে অন্তত সাতটি এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া ট্যানারি আছে। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরেই চামড়ার ভালো চাহিদা আছে। আমি মনে করি, দেশ থেকে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকলে পাচার ঠেকানো যাবে।

প্রথম আলো:

পোস্তায় চামড়ার আড়ত অনেক কমেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আফতাব খান: পুরান ঢাকা খুব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো শিল্পের অনুমতি দেওয়ার কথা নয়, তা সত্ত্বেও সেখানে বেশ কিছু প্লাস্টিক ও রাসায়নিকের অবৈধ কারখানা ও গুদাম গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ঘর ভাড়া দিলে চামড়ার আড়তের চেয়ে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। তাই স্থানীয় বাড়ির মালিকেরা তাঁদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়েছে চামড়ার আড়ত। এ কারণে চামড়ার আড়ত কমছে।

পোস্তায় চামড়ার আড়ত কমার পেছনে দ্বিতীয় আরেকটি কারণ রয়েছে। ২০১৭ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর গত কয়েক বছরে সাভারে চামড়াশিল্প নগরীর পাশেই অনেকগুলো আড়ত গড়ে উঠেছে। সেখানে বর্তমানে আড়তের সংখ্যা প্রায় ১০০। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। এটি পোস্তায় আড়ত কমার আরেকটি কারণ।

প্রথম আলো:

ভালো চামড়ার ভালো দাম পেতে করণীয় কী?

আফতাব খান: চামড়াজাতীয় সম্পদ। সাধারণত কোরবানিদাতারা পশুর চামড়া বা তা বিক্রির অর্থ মাদ্রাসা-এতিমখানা বা দুস্থ মানুষের মধ্যে দান করেন। অর্থাৎ চামড়া বিক্রির টাকা শতভাগ গরিব মানুষেরা পায়। ফলে চামড়া যত্নসহকারে কেটে সঠিকভাবে লবণ দেওয়া হলে এই শ্রেণির মানুষেরাই বেশি উপকৃত হবেন।

পশুর মাংস ছাড়ানোর সময় যত্নসহকারে চামড়া কাটতে হবে। লবণ দেওয়ার আগে চামড়ায় লেগে থাকা বাড়তি মাংস ছাড়িয়ে নিতে হবে। চামড়া ছাড়ানোর সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হবে; তা না হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থাৎ সঠিকভাবে লবণ দেওয়া হলে চামড়ার ভালো দাম পাওয়া সম্ভব।