শঙ্কার মধ্যেও স্বস্তির অর্থনীতি

বছর শুরু হয়েছিল প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ধারার সুখবর দিয়ে। ব্যবসায়ীরাও ছিলেন স্বস্তিতে। কিন্তু মার্চে সব ভাবনা তছনছ করে দিল করোনা। ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর অকল্পনীয় ধাক্কায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে অর্থনীতি। এর মধ্যে প্রবাসী আয় ও রিজার্ভেই ছিল কেবল সুখবর। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের আলোচিত কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে।

বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ

কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গত ২৫ মার্চ ৫,০০০ কোটি, ৫ এপ্রিল ৬৭,৭৫০ কোটি এবং পরে আরও মিলিয়ে ২১টি প্যাকেজে মোট ১,২১, ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার।

লকডাউন

২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। নিত্যপণ্য ছাড়া সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ধাপে ধাপে সেই লকডাউন বৃদ্ধি করে সরকার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সীমিতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া শুরু হয়।

রপ্তানিতে ধাক্কা

করোনায় ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত এবং কারখানা বন্ধ থাকায় এপ্রিলে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। শেষ পর্যন্ত গত অর্থবছর ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।

আরও পড়ুন

প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফন

প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনায় বাড়তে শুরু করেছিল আয়। করোনায় হঠাৎ ধাক্কা লাগে প্রবাসী আয়ে। বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ পথ। ফলে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়।

আরও পড়ুন

রিজার্ভে রেকর্ড

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নতুন নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে গেছে। করোনার মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন

ভোগান্তিতে পোশাকশ্রমিক

গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ৪ এপ্রিল কাজে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্পাঞ্চলে ফেরেন পোশাকশ্রমিকেরা। ব্যাপক সমালোচনা হলে রাতে কারখানা বন্ধের অনুরোধ করে মালিকদের সংগঠন। তখন বাড়ি ফিরতে আরেক দফা ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন

মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার

মাথাপিছু আয় প্রথমবারের মতো দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২০৭৪ ডলার। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় আড়াই গুণ হয়েছে।

আরও পড়ুন

করোনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পতন

করোনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে পতন হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন

রাজস্ব আদায়ে ধস

সাধারন ছুটির কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নামে। আগেরবারের চেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়। রাজস্ব আদায় হয় ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের বছরের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কম।

সুরক্ষাসামগ্রীর বিক্রি রমরমা

করোনায় মাস্ক, স্যানিটাইজারের মতো সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সুযোগে নিম্নমানের পণ্যে ভরে যায় বাজার। তবে চাহিদা থাকায় নতুন অনেক উদ্যোক্তা সুরক্ষা পোশাকে বিনিয়োগ করেন।

দেড় কোটি নতুন দরিদ্র

করোনায় নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসামীর নিচে নেমে গেছে। এই হিসাব সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)।

ঋণখেলাপিদের জয়জয়কার

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে নতুন করে ঋণ খেলাপি হবে না বলে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ঋণ শোধ না করেও খেলাপি হননি অনেক ব্যবসায়ী। আবার নতুন করে ঋণও পেয়েছেন।

সিকদার পুত্রদের কাণ্ড

সিকদার গ্রুপের মালিক জয়নুল হক সিকদারের দুই ছেলে রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন

নতুন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংককে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকেও অনুমোদন দেয়।

আলোচনায় পি কে হালদার

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান।

আরও পড়ুন

সুদহারে লাগাম

এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ সীমিত করে ফেলে। আবার খরচ সমন্বয় কমাতে আমানতের সুদ কমানো শুরু করে। ফলে সাধারণ আমানতকারীরা বিপাকে পড়েন।

করোনায় সচল ব্যাংক

করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তবে এই সময়ে খোলা ছিল ব্যাংক। করোনায় গ্রাহকদের সেবা দিতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞার মুখোমুখি হন ব্যাংকাররা। আক্রান্ত হয়ে মারা যান অনেক ব্যাংকার।

৬৬ দিন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজার

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন

বেঁধে দেওয়া হলো শেয়ারের দাম

শেয়ারবাজারের টানা পতন ঠেকাতে এ বছর নতুন এক পদ্ধতি আরোপ করা হয়। বেঁধে দেওয়া হয় শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম, নতুন এ পদ্ধতির নাম দেওয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। গত ১৯ মার্চ থেকে এ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়।

রবির লেনদেন শুরু

২৪ ডিসেম্বর থেকে মুঠোফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার লেনদেন শুরু হয় শেয়ারবাজারে। এর মাধ্যমে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্তির প্রায় এক যুগ পর এসে নতুন আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে যুক্ত হলো।

আরও পড়ুন

খেল দেখাল সোনা

করোনার সুযোগে সারা বছরই সোনার দাম ছিল অস্থির। গত ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। প্রতি ভরির দাম গিয়ে ৭৭,২১৬ টাকায় দাঁড়ায়। সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম।

আরও পড়ুন

প্রথম ইসলামি বন্ড সুকুক

শরিয়াহভিত্তিক প্রথম ইসলামি বন্ড সুকুকের মাধ্যমে চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে সরকার। বছরের একেবারে শেষ সময়ে এসে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বন্ড ইস্যু করে। এই বন্ডের বার্ষিক মুনাফার হার ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন

সরকারি পাটকল বন্ধ

হাজার কোটি টাকার লোকসানের বোঝা না বইতে পেরে ১ জুলাই ২৫ পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার। গত ছয় মাসে চাকরি হারানো শ্রমিকেরা পুরো ক্ষতিপূরণ বুঝে পাননি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালুর বিষয়েও বেশিদূর এগোতে পারেনি বিজেএমসি।

ছয় চিনিকল বন্ধ

হাজার কোটি টাকার লোকসানের বোঝা কমাতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সরকারি ছয় চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।