রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে

  • চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আড়াই শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চার মাস শেষে তা কমে দশমিক ৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

  • করোনার প্রভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে পণ্য রপ্তানিতে ধস নামে। ওই মাসে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

  • জুনে রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। পরের মাসে ৩৯১ কোটি ডলার এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয় যথাক্রমে ২৯৭ ও ৩০২ কোটি ডলারের পণ্য।

করোনার প্রভাব কাটছে না রপ্তানি খাতে।

করোনার প্রভাব কাটছে না রপ্তানি খাতে। টানা তিন মাস প্রবৃদ্ধির পর গত মাসে আবারও পণ্য রপ্তানি কিছুটা কমে গেছে। তাতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার (জুলাই-অক্টোবর) মাসে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমায় সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম তিন মাস শেষে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ তৈরি পোশাক থেকে এসেছে। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম।

করোনার প্রভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে পণ্য রপ্তানিতে ধস নামে। ওই মাসে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। জুনে রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। পরের মাসে ৩৯১ কোটি ডলার এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয় যথাক্রমে ২৯৭ ও ৩০২ কোটি ডলারের পণ্য। গত মাসে ২৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৪ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ তৈরি পোশাক থেকে এসেছে। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে ৫৮০ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৬৪ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দেশে দেশে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ বর্তমানে আসার কথা থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

জানতে চাইলে নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দেশে দেশে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ বর্তমানে আসার কথা থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরবে, সেটিও বলা যাচ্ছে না।

তৈরি পোশাকে উত্থান-পতন থাকলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটের এই সুসময়ে সরকারি পাটকলগুলো গত জুলাইয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবরে ৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে পাট সুতায় ৪৯ শতাংশ ও পাটের বস্তায় ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছিল ৩১ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অবশ্য করোনার আগে থেকেই হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরজনিত কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি নিম্নমুখী ছিল। করোনায় খাতটি আরও বাজে অবস্থার মধ্যে পড়েছে।

পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমলেও হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও হস্তশিল্পের রপ্তানি বেড়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা।