বিলুপ্ত টাইমস–বাংলার জমি
২৫ তলা ভবনে হবে চারটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়
এই জমিতে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্মসংস্থান, প্রবাসীকল্যাণ, পল্লী সঞ্চয় এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সাড়ে পাঁচ বছর পর চার বিশেষায়িত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এক ভবনে হতে যাচ্ছে। এ জন্য ঢাকার রাজউক অ্যাভিনিউতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ইজারা নেওয়া ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ২৫ তলা ভবন। একসময় এখানে ছিল সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার কার্যালয়।
বিলুপ্ত টাইমস–বাংলা ট্রাস্টের ওই জায়গা একটি পরিত্যক্ত চারতলা ভবনসহ গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ১০ বছর আগে ইজারা নেয় কর্মসংস্থান ব্যাংক। জমিটি ১৪ কোটি টাকায় ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়। তবে এখন ওই জমিতে নির্মিতব্য বহুতল ভবনটি কর্মসংস্থান ব্যাংকের পাশাপাশি প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকেরও প্রধান কার্যালয় হবে। ভবন নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩২ কোটি টাকা।
ভবন নির্মাণে কোন ব্যাংক কত দেবে এবং কোন ব্যাংক কয়টি ফ্লোর পাবে, তা নির্ধারণে সচিবালয়ে গত ১০ অক্টোবর সর্বশেষ বৈঠক হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ তলা ভবনে সাধারণ ব্যবহারযোগ্য ফ্লোর হবে চারটি। বাকি ২১টির মধ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক ৯টি এবং প্রবাসীকল্যাণ, পল্লী সঞ্চয় ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ৪টি করে ১২টি ফ্লোর পাবে।
দেশের যেসব বিশেষায়িত ব্যাংকের নিজস্ব প্রধান কার্যালয় ভবন নেই, তাদের সবার জন্য একটি বহুতল ভবনে প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন বা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ীই এক জায়গায় চার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলা হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ গত শনিবার বলেন, ‘ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।’ এর নাম কি ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন’ হবে নাকি ‘বিশেষায়িত ব্যাংক ভবন’ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
এদিকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাবে। আর ভূমি আইন ও ভূমিমালিকানার নিয়ম অনুযায়ী ভবনের নাম কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবনই হওয়ার কথা।
গতিহীন চার বছর
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন ভবনের নাম ঠিক করা হয় ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন’। ওই বৈঠকে অবশ্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে নাম ‘বিশেষায়িত ব্যাংক ভবন’ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এরপর ওই জমিতে ৩৫৯ ফুট উচ্চতার ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ২০১৯ সালের ২৬ জুন স্থাপত্য অধিদপ্তর ভবনের নকশা তৈরি করে কর্মসংস্থান ব্যাংকে পাঠায়, যা ব্যাংক অনুমোদন করে। ২৩২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত করে।
জমির মৌজা মূল্য ৩৬ কোটি টাকা এবং বাজারমূল্য ১৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কর্মসংস্থান ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানায়, ভবন নির্মাণে তারা আর কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। ফলে এই বছরের ২০ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভবনের ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থান ব্যাংক, আর প্রবাসীকল্যাণ ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ২৫ শতাংশ করে ফ্লোর পাবে। তখন আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের নাম তখন ছিল না। প্রধান কার্যালয় করতে পূর্বাচলে ব্যাংকটির ৩২ কাঠা জমি রয়েছে।
টাকা দিতে অর্থ বিভাগের ‘না’
জানা গেছে, শুরুর দিকে এই জমিতে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে ২১১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। অর্থ বিভাগ তখন টাকা দিতে অপারগতা জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণের পরামর্শ দেয়। এ রকম অবস্থায় অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি, রাকাবসহ আটটি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণে অংশগ্রহণ ও ফ্লোর কেনার আগ্রহ দেখায়।
এদিকে বিলুপ্ত টাইমস–বাংলা ট্রাস্টের দেনা পরিশোধ নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। ট্রাস্টের আওতাধীন পত্রিকা ছিল দৈনিক বাংলা ও বিচিত্রা। ট্রাস্টের কাছে জনতা ব্যাংক ৭০ লাখ, অগ্রণী ২৩ লাখ, রূপালী ৮ লাখ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ৪৯ লাখ টাকা পায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলছে, ব্যাংকের টাকা পরিশোধের দায়িত্ব তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের।
অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারা এ জন্য কোনো বরাদ্দ দিতে নারাজ।
পাওনাদারদের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছি।’