সরকারের করের টাকাও মেরে দিয়েছে লিজিংটি

শুধু গ্রাহকদের জমা টাকা নয়, সরকারের রাজস্ব বাবদ আদায় করা অর্থও খেয়ে ফেলেছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক ও কর্মকর্তারা। আর সবকিছুই ঘটেছে প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ইঙ্গিতে, যার বড় সুবিধাভোগীও তিনি। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সেবার বিপরীতে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব (ভ্যাট) গ্রাহকের কাছ থেকে ঠিকই ৫৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। কিন্তু তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি। আবার আমানত সংগ্রহের নামে ৬৭ কোটি টাকা খরচ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যার কোনো হিসাব মিলছে না।

আদালতের আদেশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নিযুক্ত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান নিজেই প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যা জেনেছি, তা-ই বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। প্রতিষ্ঠানটিতে যা ঘটেছে, তা সবাই জানে।’

আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় কয়েকজন গ্রাহকের মামলার প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ১ জুন আদালত সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। বার্ষিক প্রতিবেদনে নজরুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, অত্যন্ত সফল কোম্পানি আজ টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। ঋণ প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতা, জামানত ছাড়াই ঋণ, সুযোগ বুঝে ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধ না করা, পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই ঋণ কিংবা নির্দেশিত জামানত না নেওয়া এর মূল কারণ।

আরও পড়ুন

বার্ষিক প্রতিবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বিভিন্ন সেবার বিপরীতে সরকার নির্ধারিত কর বাবদ ৫৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। আবার ভুতুড়ে ৬৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের কমিশনেরও কোনো হদিস নেই। এ ছাড়া আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাঁদের আমানত তুলে নিতে চাওয়ায় তা প্রতিষ্ঠানের জন্য “গোদের উপর বিষফোড়া” হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বোপরি কর্মীরা অভিভাবকহীন থাকা অবস্থায় একদিকে চেক ইস্যু মামলার সূত্রপাত ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, অন্যদিকে মামলার আতঙ্কে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও কর্মীরা হয়ে পড়েন দিশেহারা।’

নজরুল ইসলাম খান প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন, ‘ইতিমধ্যে ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে মুখোমুখি সভার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে ঋণ পুনঃতফসিল ও বকেয়া কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে আমানতকারীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক মন খুলে সহায়তা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আমানত নবায়ন করা হয়েছে। আমরা আমাদের সকল সেবাগ্রহীতার আস্থা অর্জন ও সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’