রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোই বিদেশে পানের বাজার হারানোর কারণ

সরকার প্রতি কেজিতে পানে রপ্তানি শুল্ক এক ডলার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ ডলার নির্ধারণ করায় দেশে থেকে পণ্যটির রপ্তানি কমে গেছে। একই সঙ্গে পানের দরপতন ঘটেছে। এতে দেশের পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে জন্য রপ্তানিমুখী ফসল পানের চাষাবাদ ও পানচাষিদের বাঁচানোর দাবি জানিয়ে আজ বুধবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কৃষি উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে ১০ দফা দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ পান চাষি সমিতির যশোর শাখার নেতারা এই স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশের অনেক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরি ফসল পান। এটি চাষের সঙ্গে পানচাষি ছাড়াও খেতমজুর, পাটকাঠি, বাঁশ ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত।

বাংলাদেশের পান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। এর মাধ্যমে বছরে দেশের ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি কেজি পান রপ্তানিতে শুল্ক ১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ ডলার নির্ধারণ করায় বিদেশি বাজারে দেশের পান রপ্তানি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এতে দেশে পানের দর ব্যাপকভাবে কমে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাংক ও এনজিও ঋণের চাপেও অনেক চাষি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

পান চাষি সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—পান রপ্তানিতে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল ও রপ্তানিবান্ধব নীতি গ্রহণ; আপৎকালে পানচাষিদের এনজিও ঋণের কিস্তি স্থগিত করা; পান চাষনির্ভর খেতমজুরদের ত্রাণসহায়তা প্রদান; রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি পানচাষিদেরও প্রণোদনা দেওয়া; পান চাষের উপকরণের দাম কমানো; পান গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক সংরক্ষণাগার ও পানশিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলা; চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ; পানবরজের জমির অতিরিক্ত খাজনা নেওয়া বন্ধ; পান চাষে বিমা চালু এবং জাতীয় পান বোর্ড গঠন।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার পানচাষি শেখ নুর আলম ৫ কাঠা জমিতে পান চাষ করেছেন। কিন্তু পানের দাম না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। নুর আলম অভয়নগর পান চাষি সমিতির সদস্যসচিব।

নুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি কেজি পান রপ্তানিতে ভ্যাট এক ডলার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ ডলার করা হয়। এ কারণে দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানের দরে পতন ঘটেছে। বাজারে এখন পানের যা দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। আমরা মহা বিপাকে আছি। পানচাষিদের বাঁচানোর জন্য চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

আজ দুপুরে বাংলাদেশ পান চাষি সমিতির যশোর শাখার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে পানচাষিরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তসলিম উর রহমান। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।