ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়তে পারে

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য যে মানের কেব্‌ল প্রয়োজন, তার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়।

ইন্টারনেট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম করারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল আমদানিতে আরও ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার যাদের ওপরই বাড়তি করারোপ করুক না কেন, তা শেষমেশ গ্রাহকের পকেট থেকেই যাবে।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এটি আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান। তাই দেশীয় শিল্প রক্ষায় অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল আমদানিতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে।

সরকার ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় যার ওপরই কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা গ্রাহকের ঘাড়েই পড়বে। গ্রামে যাঁরা নতুন করে ব্রডব্যান্ড সেবা নেবেন, তাঁদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে।
ফাহিম মাশরুর, সাবেক সভাপতি, বেসিস

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য যে মানের কেব্‌ল প্রয়োজন, তার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। বাজারে চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ কেব্‌লই দেশের বাইরে থেকে আসে। কোনো গ্রাহক যখন ইন্টারনেট সেবা নেন, তখন সংযোগ ফি হিসেবে যে টাকা নেওয়া হয়, সেখানে এই কেব্‌লের দামও ধরা হয়। দূরত্বভেদে এই মাশুল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা হয়ে থাকে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যে কেব্‌ল উৎপাদিত হয়, তা অতটা মানসম্পন্ন নয়। ইন্টারনেট সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সে হিসাবে আমদানি করা কেব্‌লের ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো মানে গ্রাহক পর্যায়েও সেই কেব্‌লের দাম বেড়ে যাওয়া। তখন সংযোগ মাশুলও বেড়ে যাবে।

সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত ‘এক দেশ, এক রেট’ প্যাকেজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, সরকার ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় যার ওপরই কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা গ্রাহকের ঘাড়েই পড়বে। গ্রামে যাঁরা নতুন করে ব্রডব্যান্ড সেবা নেবেন, তাঁদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে।

আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, তাদের খাতকে আইটিএস খাতে অন্তর্ভুক্ত করার। গত ৭ এপ্রিল ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স সভায় আইএসপিকে আইটিএস খাতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আইএসপিএবি ৮ জুন এনবিআরকে চিঠি দেয়। তারা বিভিন্ন স্তরের কর মওকুফের দাবি জানিয়েছে।

তবে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এটার সরাসরি হয়তো প্রভাব পড়বে না। তবে সব আইএসপি যে বছর শেষে লাভ করবে, সেটাও তো বলা যায় না। কোনো প্রতিষ্ঠান অগ্রিম ১০ শতাংশ কর দিয়ে থাকলে পরে তার যদি লোকসান হয়, তখন সে টাকা এনবিআরের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হবে।