বেতন-বোনাস পাননি অনেক শ্রমিক

গাজীপুর সিটির লক্ষীপুরা এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ছবি: সংগৃহীত

কাল বা পরশু পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে তৈরি পোশাকশিল্পের সব শ্রমিক এখনো বেতন-ভাতা বুঝে পাননি। আজ বুধবার অনেক কারখানা বেতন-ভাতা দিলেও, শেষ পর্যন্ত কিছু শ্রমিক পাওনা পাবেন কি না, সে শঙ্কাও আছে। যদিও ১০ মের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল।

শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৪ হাজার ৭৫৪টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা আছে। তার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৩টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। তার মানে ২৮১টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বেতন দেয়নি। আর ৪ হাজার ৭৫৪টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৪৩৬টি বোনাস দেয়নি।

আরও পড়ুন

শিল্প পুলিশের হিসাবে ঢাকা মহানগরের কারখানার তথ্য নেই। তবে আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৬৪৩ কারখানা তদারক করছে সংস্থাটি। তারা বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৮০টি কারখানা বেতন দেয়নি। ঈদ বোনাস দেয়নি ১২০ কারখানা।

একইভাবে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ৮১৬ কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৬১টি বেতন দেয়নি। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি ৪৮ কারখানা। অন্যদিকে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩১০টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৪টি বেতন দেয়নি। আর বোনাস পরিশোধ করেনি ২৮টি বস্ত্রকল।

অবশ্য আজ বেলা দুইটার দিকে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯১৩। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৬৬ কারখানা বেতন দিয়েছে। আর বোনাস দিয়েছে ৯৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৮২২ কারখানা। তিনি জানান, আজ ঢাকায় ১৫টি কারখানা বেতন ও ৮টি বোনাস দিচ্ছে। চট্টগ্রামে ৩২টি কারখানা বেতন ও ২৩টি বোনাস দিচ্ছে।

বেতন-ভাতা সমস্যা হতে পারে এমন ৮০০টি কারখানায় কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ৪৪টি কারখানার বেতন-ভাতা প্রদানে সহায়তা করা হয়েছে।
ফারুক হাসান, সভাপতি, বিজিএমইএ

ফারুক হাসান বলেন, বেতন-ভাতা সমস্যা হতে পারে এমন ৮০০টি কারখানায় কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ৪৪টি কারখানার বেতন-ভাতা প্রদানে সহায়তা করা হয়েছে। আজকের মধ্যে শতভাগ কারখানা বেতন-ভাতা দেবে। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটি নিয়ে কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা সব সময়ই ঈদ ও আগের ছুটি সমন্বয় করে ৪ থেকে ৮ দিনের ছুটি দেন। ছুটি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

ঈদের ছুটিতে পোশাকশ্রমিকদের গ্রামে না গিয়ে কর্মস্থলে থাকার অনুরোধ করে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘গ্রামে যাওয়া থেকে বিরত থেকে কর্মস্থলে থাকুন। তাহলে আপনি এবং দেশ নিরাপদ থাকবে।’ আর যাঁরা ইতিমধ্যে গ্রামে চলে গেছেন, তাঁদের মাস্ক পরতে আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে অংশ নেন বিজিএমইএর সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহিদউল্লাহ আজিম, এস এম মান্নান, পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান প্রমুখ।
তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বাইরে অন্য খাতের শিল্পকারখানারও বেতন-ভাতা বাকি রয়েছে। শিল্প পুলিশ জানায়, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় পোশাক ও বস্ত্র খাতের বাইরে ৪ হাজার ৭৫৪টি অন্য শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২৮১টি বেতন দেয়নি। বোনাস পরিশোধ করেনি ৪৩৬টি শিল্পকারখানা।

১০ মের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও অনেক শিল্পমালিক সেটি মানেননি।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সমস্যা না হলেও ঠিকায় কাজ করা (সাব-কন্ট্রাকটিং) কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা অনিশ্চয়তায় আছেন। আবার বড় ও মাঝারি কারখানা মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ঈদ বোনাস দিলেও সাব-কন্ট্রাকটিং কারখানাগুলো দিচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার শক্ত তদারকির অভাবেই প্রতি ঈদেই শেষ মুহূর্তে শ্রমিকের বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়।