পাইকারির বঙ্গবাজারে এখন খুচরা বিক্রিই ভরসা

ছাতায় বসিয়ে রোদের মধ্য কাপড় বিক্রি করছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। ছবিটি গতকাল শনিবার তোলা
ছবিধ সাজিদ হোসেন

রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা সব সময় পাইকারি বেচাকেনাকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর গত বুধবার থেকে খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে বসেছেন তাঁরা। সেখানে তাঁদের এখন খুচরা বিক্রিতেই বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে।

বঙ্গবাজারে সাধারণত রমজানের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাইকারি বেচাকেনা হয়। কিন্তু ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে সেখানকার ব্যবসায়ে ধস নামে।

আগুনের ধাক্কা কাটিয়ে ৯ দিন পরে ১২ এপ্রিল থেকে চৌকি পেতে বেচাকেনা শুরু করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেখানে কোনো পাইকারি ক্রেতা আসছেন না। ফলে ঈদের আগে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের খুচরা বেচাকেনাতেই নির্ভর করতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন করে বসলেও বঙ্গবাজারে ক্রেতার সংখ্যা এখনো তেমন বাড়েনি। বরং প্রচণ্ড গরমের কারণে তাঁদের জন্য সেখানে বসা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা অগ্নিকাণ্ডের সময় কিছু পোশাক বাঁচাতে পেরেছেন, কিংবা যাঁদের বাইরে গোডাউন বা কারখানা রয়েছে, তাঁরা নিজেদের পণ্য নিয়ে বসেছেন। অন্যরা দোকানের জায়গা ঠিক রাখতে নতুন করে অল্প কিছু পণ্য কিনে এনে চৌকি পেতে বসেছেন। অধিকাংশই শপিং ব্যাগের বদলে পলিথিন ব্যাগে ক্রেতাদের পণ্য দিচ্ছেন।

হিমু গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী আল আমিন বলেন, আগে তো পাইকারি বিক্রি হতো। এখন খুচরা ক্রেতা বেশি। তাঁরা দাম অনেক কম বলেন। এক পিস কাপড় দেখিয়ে আল আমিন বলেন, এটার পাইকারি দাম ৪৩০ টাকা। কিন্তু একটু আগে একজন গ্রাহক আড়াই শ টাকা বলে গেলেন।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের বঙ্গ মার্কেটের তৃতীয় তলায় প্যান্টের দোকান ছিল রাকিব খানের। আগুনে সব মালামাল পুড়ে গেছে। চার দিন আগে কয়েকটি গার্মেন্টস থেকে ৯২০ পিস প্যান্ট কিনে চৌকিতে বসেছেন তিনি। রাকিব বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ঈদ মৌসুমে দৈনিক অন্তত ৭০ হাজার টাকার পাইকারি পণ্য বিক্রি হতো তাঁর। কিন্তু গত দুই দিনে পাইকারিতে পণ্য বিক্রি হয়নি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।

শার্ট ও গেঞ্জি বিক্রির দোকান নিউ খান ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী শাহাদাত খান বলেন, ‘অধিকাংশ খুচরা ক্রেতা আমাদের এখন ফুটপাতের বিক্রেতা মনে করে কেনা দামের চেয়েও পণ্যের দাম কম বলেন। এখানে যে একটা বড় মার্কেট ছিল, তা যেন সবাই ভুলেই গেছেন। মনে হয়, আমরা আকাশ থেকে মাটিতে নেমে গেছি।’

বঙ্গবাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, দিনের বেলায় বালুর কারণে প্রচণ্ড গরম থাকে। এ ছাড়া বালু উড়ে সাজিয়ে রাখা পোশাকের মধ্যে পড়ে। গরমের কারণে দিনের বেলায় এখানে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকে। আসরের নামাজের পর ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকে। আর দোকানের কর্মচারীরা পালা করে চৌকিতে বসেন।

আরও পড়ুন

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল আহমেদ খান বলেন, এই কমপ্লেক্সে প্রায় চার হাজারের মতো লোক কাজ করেন। এই মুহূর্তে তাঁদের সবার জন্য স্থায়ী স্থাপনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো জায়গাটা ত্রিপল (শামিয়ানা) দিয়ে ঢেকে দিতে পারলে গরমে তাঁদের কষ্টটা কম হতো।