সময় বাঁচাতে ‘মুঠোফোনে’ আয়কর পরিশোধ

কর অঞ্চল–১০ এ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন করদাতারা। আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায়
ছবি: প্রথম আলো

আগামীকাল ৩০ নভেম্বর আয়কর তথ্যসেবা মাস শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর গত অর্থবছরের রিটার্ন জমা দিতে জরিমানা লাগবে। সে জন্য আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার কর অঞ্চলগুলোতে শেষ সময়ে রিটার্ন জমা দিতে ভিড় করছেন অনেকে। হাতে সময় আছে আর মাত্র এক দিন। এই সময়ে কর জমা দিতে ব্যাংকের লাইনে না দাঁড়িয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমেও অনেকে আয়কর জমা দিচ্ছেন।

ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব থেকে অনেকে আয়কর জমা দিচ্ছেন, আবার যাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, তাঁরা বিভিন্ন দোকান থেকে আয়কর পরিশোধ করছেন। সেগুনবাগিচার দোকানগুলো কাস্টমস বন্ড ও ইনকাম ট্যাক্স ই-পেমেন্ট সেবা দিচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের নিজাম টেলিকমের মালিক মো. মুহিউদ্দীন বলেন, ‘অনেকে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে চান না। সে ক্ষেত্রে করের টাকার পরিমাণ জানালে আমরা পেমেন্ট করে দিই। তবে আমরা শুধু পেমেন্ট সেবা দিচ্ছি। আমাদের এখানে ফাইল রেডি করার সেবা নেই। কাগজপত্র ফটোকপি করার পাশাপাশি এই সেবা চালু রেখেছি। মোটামুটি ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

এসব সেবা নিতে তরুণদের আগ্রহ বেশি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন সেগুনবাগিচার বিসমিল্লাহ ফটোস্ট্যাটের মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকে এখন মোবাইলের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে চান; কারণ তাঁরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দেওয়া ঝামেলা মনে করেন। আমরা তো সেবা দিচ্ছি, পাশাপাশি অনেক মানুষকে বলেও দিই, কীভাবে জমা দিতে হয়। ফলে অনেকে নিজের মোবাইল থেকে আয়কর জমা দিতে পারেন।’

সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-১০–এ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসেন তরুণ ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে রিটার্ন দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। পাড়ার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কাগজ রেডি করে রিটার্ন জমা দিলাম। টাকাপয়সা মোবাইলে জমা দিয়েছি, তাতে কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে।’

অনেকে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা আবুল খায়ের জানান, ‘ছেলেমেয়েরা সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। পরিবারের সবার রিটার্ন জমা দিতে যানজট ঠেলে আমাকে আসতে হলো। সব কাজ আমাকেই করতে হলো। আগে যেভাবে করতাম, সেভাবে করেছি। তবে শুনেছি, মোবাইলেও টাকা জমা দেওয়া যায়। এখন দেখছি ভালো ভিড় আছে, কিন্তু কাজ শেষ করেই বাসায় ফিরতে চাই।’

আরও পড়ুন

কাজটা একবার শিখে নিলে সহজ মনে করেন রাজধানীর শান্তিনগরের তরুণ চিকিৎসক এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো রিটার্ন জমা দিলাম। এবারের অভিজ্ঞতা গতবারের তুলনায় ভালো। ব্যাপারটা যাঁরা না বোঝেন, তাঁদের জন্য অসুবিধা। একবার বুঝে উঠতে পারলে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়।’

আজ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সেগুনবাগিচা এলাকার কর অঞ্চলে বেশ ভিড় দেখা গেছে। দিনভর পুরো এলাকায় ছিল যানজট। আয়কর কর্মকর্তাদের বেশ ব্যস্ত দেখা গেল। ভিড় বেশি থাকায় লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন অনেকে।

মালিবাগের আজিজুল হক বলেন, ‘শেষের দিকে এলে একটু সময় লাগে সত্য, তবে আমরাও দেব দেব করে শেষ দিকেই আসি। একটু আগেভাগে কাজ শেষ করে আসতে পারলে সবার জন্য সুবিধা হতো।’

একই কথা কর কর্মকর্তাদের মুখেও। কাজের ব্যস্ততায় কথা বলার মতো সময় নেই। এর মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়কর ১০ অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সময়ে ভিড় বেশি হবে, এটা সত্য। তবে বিষয়টা এমন যে সবাই এই সময় রিটার্ন জমা দিতে চান। মাসের শুরুতে এলে আমাদের কাজও সহজ হয়। যেহেতু রিটার্ন দিতেই হবে, সেহেতু আগেভাগে এলেই ভালো।’

আরও পড়ুন

মোবাইলে আয়কর দেবেন যেভাবে
আয়কর বিকাশ করুন কোনো ঝামেলা ছাড়াই, ঘরে বসে। আয়কর দিতে-http://www.nbrepayment.gov.bd/; এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে যাঁরা নিবন্ধন করেছেন তাঁরা এবং যাঁরা নিবন্ধন করেননি, উভয়েই অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন।

যাঁদের নিবন্ধন করা আছে, তাঁরা এনবিআরের ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করে ‘পে ইনকাম ট্যাক্স’ থেকে ট্যাক্স অপশনে ট্যাপ করে টিআইএন দিলে তা ভেরিফাই হয়ে যাবে এবং অনলাইন পেমেন্ট অপশন পাওয়া যাবে।

সেখানে টিআইএন সাবমিট করে মোবাইল পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করে হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বরে আসা ৬ সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড ও পিন দিলেই আয়কর পরিশোধ সম্পন্ন হবে। নিবন্ধন করা না থাকলেও গেস্ট ইউজার হিসেবে পেমেন্ট করে আয়কর পরিশোধ করা যাবে।

বিকাশের মাধ্যমে আয়কর পরিশোধে ১ দশমিক ১ শতাংশ মাশুল প্রযোজ্য হচ্ছে বলে এনবিআরের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।