সফটওয়্যার, মুঠোফোনের দাম বাড়লে স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে হবে

এ কে এম ফাহিম মাশরুর

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, যার কারণে দেশের সফটওয়্যার উৎপাদন ব্যাহত হবে। যেমন দেশের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে ডেটাবেজ, সিকিউরিটি সফটওয়্যারের ওপর আগের কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট ছিল ৫ শতাংশ, তা ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে এসব দিয়ে আমরা যেসব সফটওয়্যার তৈরি করি, সেগুলোর দাম ৩০ শতাংশের ওপরে বেড়ে যাবে।

আমরা দেশের সফটওয়্যার নির্মাতারা আগে থেকেই বলে আসছি, বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হোক। তবে যেসব সফটওয়্যার দেশে উৎপাদিত হয় যেমন এইচআর, ব্যাংকিং, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার, সেগুলো আমদানির ওপর যেন কর ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, এতে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পেত। দেশের অনেক কোম্পানি এসব সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। কিন্তু সরকার এসব সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি না করে আমাদের সফটওয়্যারের কাঁচামালে শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব দিল। অপারেটিং সিস্টেম, সিকিউরিটি সফটওয়্যার, ডেটাবেজ—এসব দেশে উৎপাদিতই হয় না। এগুলো দিয়ে আমরা সফটওয়্যার তৈরি করি। এগুলোর দাম বেড়ে গেলে আমাদের সফটওয়্যারের দাম বাড়বে। এতে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বিনষ্ট হবে।

একটি বিষয় হলো, স্থানীয় সফটওয়্যার নির্মাতাদের ওপর এত দিন ভ্যাট ছিল না। বিশেষায়িত সেবা বা সফটওয়্যার নির্মাণে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। শেষ বিচারে গ্রাহকদেরই এই বাড়তি মূল্য দিতে হবে। তাতে সফটওয়্যার কেনাবেচা কমে যেতে পারে।

পাঁচ বছরে আমাদের শিল্পের জন্য ইতিবাচক কিছু করা না হলেও নেতিবাচক কিছু ছিল না। কিন্তু এবারের বাজেটে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের জন্য নেতিবাচক হলো। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ করতে চায়। সে জন্য আমরা ভেবেছিলাম, প্রণোদনা দেওয়া না হলেও আমাদের অন্তত নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে। সেটা তো হলো না, বরং পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলা হলো। এই প্রস্তাব পাস হলে উভয় দিক থেকেই দেশের সফটওয়্যার নির্মাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ ছাড়া প্রতিবছরই বাজেটের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেসিসসহ অনেকের কাছেই প্রস্তাব চায়। আমরা নিয়মিতই তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাজেট প্রস্তাব দিই। বেসিস থেকে এবার ১০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা এনবিআর একটিও আমলে নেয়নি। সে জন্য মনে হয়, তারা লোক দেখানোর জন্য এসব বাজেট আলোচনা করে। তাদের এখন রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে, সে জন্য আমাদের খাতে এভাবে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে সরকারের ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণার কী হবে, তা আমলে নেয়নি। বিষয়টি সাংঘর্ষিক।

আবার দেশে উৎপাদিত মুঠোফোনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়তে পারে। ফলে দাম বাড়তে পারে মুঠোফোনের। এমনিতেই দেশে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার কম, শহরাঞ্চলে এখনো ৩০-৪০ শতাংশের মতো। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে মুঠোফোনের দাম এমনিতেই গত এক বছরে বেড়েছে। এখন আরও বাড়বে। গ্রামের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারে এমনিতেই পিছিয়ে আছে, এখন আরও পিছিয়ে পড়বে।