ঈদের পর কমেছে আলু, শসা ও মুরগির দাম

ঈদের পরে প্রথম কার্যদিবসে বিক্রি কম। তাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন দোকানি। কারওয়ান বাজারের ছবি।
ছবি: প্রথম আলো

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকেই ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আবার ঈদের পরেও  বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। এদিকে ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার সংখ্যা বাড়ছে। এ রকম অবস্থায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো অনেকটাই নিরুত্তাপ।

ঈদের ছুটি শেষে আজ রোববার প্রথম কার্যদিবসে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে খুব কম দোকান খুলেছে। ক্রেতাও দেখা গেছে নগণ্য। এমন দিনে পচনশীল পণ্যগুলো তুলনামূলক কম দামেই ছেড়ে দেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে অপচনশীল পণ্যগুলোর দাম ধরে রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা। ক্ষেত্রবিশেষে দাম বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে।  

আরও পড়ুন

ফাঁকা শহরের শান্তিনগর, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের ঠিক আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতিকেজি পাইকারিতে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, খুচরায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। তবে ক্রেতা কম বলে হতাশ নন কোনো বিক্রেতা

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের এক ব্যবসায়ী তো বলেই ফেললেন, দুদিন পরই ঢাকায় মানুষ বাড়বে, তখন পেঁয়াজ লাগবে। এখন সব বিক্রি করে দিলে কীভাবে হবে?

আলু ফিরে এসেছে আগের অবস্থানে। কারওয়ান বাজারে আলুর কেজি ১৫ থেকে ১৭ টাকা। অন্যান্য বাজারে তা ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি। তবে দামাদামি করলে কিছুটা কমে কেনা যায়। পুরো রমজান মাসেই আলু বিক্রি হয়েছে এমন দামে, যদিও ঈদের আগের দুই দিন আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা করে বেড়ে গিয়েছিল।

ক্রেতা কম বলে হতাশ নন কোনো বিক্রেতা । হাতিরপুল কাঁচাবাজারের এক ব্যবসায়ী তো বলেই ফেললেন, দুদিন পরই ঢাকায় মানুষ বাড়বে, তখন পেঁয়াজ লাগবে। এখন সব বিক্রি করে দিলে কীভাবে হবে?

তবে কাঁচা শাকসবজির দাম ব্যাপক হারে কমেছে। পুরো রমজান মাসে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছিল ৫০-৬০ টাকা দামে। ঈদের তিন–চার দিন আগে শসার কেজি সেঞ্চুরি হাঁকানোর পরও ২০-৩০ টাকা বেশি ছিল।

আজ রোববার কাঁচাবাজারে শসার দিকে তাকাতেই এক বিক্রেতা বলে ওঠেন, আপা ৪০ টাকা দেন। একটু মুখ ফিরিয়ে নিলে, ‘আচ্ছা আপা ৩০ টাকা? দুই কেজি নেন, ৫০ টাকা দিলেই হবে।’ সুপার মার্কেটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে থাকা শসার অবশ্য এখনো ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়ার মান ধরে রেখেছে।

কাঁচাবাজারে শসার পথ ধরে দাম পড়েছে বেগুনসহ অন্যান্য সবজির। বাজারভেদে এগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা মরিচও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর লেবু তো আকারভেদে ২০-৩০ টাকা ডজনে ডেকে ডেকেই দিচ্ছে।
কমেছে মুরগির দরও। সোনালিকা জাতের মুরগির কেজি ঈদের আগে ৩০০ টাকার ওপরে উঠেছিল। ঈদ যেতেই আবার ২৫০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে। ব্রয়লার মুরগিও ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

এদিকে মুদিখানার চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ মুদিদোকানই খোলা হয়নি। যাও–বা খোলা হয়েছে, সেগুলোতে বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। ঘুমাতে বা ঝিমাতে দেখা গেছে অনেককে। যাঁরা জেগে থাকেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। এ রকমই এক জায়গায় গল্পে ব্যাঘাত ঘটিয়ে জানতে চাইলাম, খোলা চিনির দর কত? সাফ জবাব, ৭০ টাকা কেজি।

ঈদের পরে ছোট দানা মসুর ডালের দাম কিছুটা কমেছে। বিভিন্ন বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় দানার মসুর ডাল ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ফলের দামও কমেছে। তবে বাজারে আসা নতুন ফলগুলোর দাম বাড়তিই। ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কালোজাম ১০০ টাকা কেজি। আর ছোট আকারের পাকা আম গড়ে ১০০ টাকা কেজি। বিক্রেতা কম থাকলেও বাজারে ক্রেতার ভিড় যতটুকু আছে, তা এই ফলের বাজারেই। অনেক খাওয়া হলো ঈদের খাবার। এবারে একটু স্বাদ বদল করতেই হয়তো ফলের দোকানে ভিড়ছেন ভোক্তারা।