সময় বাড়ল আরও দুই বছর

  • ২০২২ সালের জুনের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

  • এক বছরের মধ্যে ত্রুটি দেখা দিলে তা ঠিকাদার নিজ টাকায় ঠিক করবেন

  • প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না, তা ৩০,১৯৩ কোটি টাকাই থাকবে।

প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আমরা প্রস্তাবটিকে যৌক্তিক ভেবে অনুমোদন করেছি। তবে এ জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের খরচ বাড়েনি

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এই সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে না। এমন বাস্তবতায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। পরের এক বছর রাখা হয়েছে ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি) হিসেবে। এই এক বছরে সেতুতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা ঠিকাদার নিজ টাকায় ঠিক করে দেবে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতু বিভাগ আমাদের বলেছে, করোনা মহামারি ও গত বছরের বন্যার কারণে কাজের গতি ব্যাহত হয়েছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আমরা প্রস্তাবটিকে যৌক্তিক ভেবে অনুমোদন করেছি। তবে এ জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের খরচ বাড়েনি।’

আরও পড়ুন

এ নিয়ে পঞ্চম দফায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজে অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। বাকি ১৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে আরও এক বছর সময় চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি) চাওয়া হয়েছে আরও এক বছর।

সাধারণত, যেকোনো প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ক্ষমতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের। তবে এই সময়ে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। অর্থাৎ, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকাই থাকবে প্রকল্প ব্যয়।

সেতু বিভাগের প্রস্তাব পাওয়ার পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে যায়। প্রতিনিধিদলটি সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে সরেজমিন প্রতিবেদন পেশ করে।

করোনার প্রভাবে বিদেশি পরামর্শক ও চীনা ঠিকাদারদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে বিধিনিষেধের কারণে কাজে যোগ দিতে পারেননি
প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, সচিব, আইএমইডি

আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলমান। ইতিমধ্যে ৩৬টি পাইলের সব কটির ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। পটুয়াখালীর পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনমতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মাওয়া সংযোগ সড়ক, জাজিরা সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার (দুই) কাজ পুরোপুরি শেষ। নদীশাসনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৪১টি স্প্যানের সব কটিই স্থাপন হয়ে গেছে। বর্তমানে রোড ও রেলওয়ে স্ল্যাব, সুপার ওয়ান গার্ডার এবং রেলওয়ে ওয়ান গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। রোডওয়ে স্ল্যাব নির্মাণ হয়েছে ২ হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে সেতুতে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৬টি। রেলওয়ে স্ল্যাব নির্মাণ হয়েছে ২ হাজার ৯৫৯টি। এর মধ্যে সেতুতে স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ২৬৬টি।

জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, করোনার প্রভাবে বিদেশি পরামর্শক ও চীনা ঠিকাদারদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে বিধিনিষেধের কারণে কাজে যোগ দিতে পারেননি। এ ছাড়া গত বছর প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াতেও নির্মাণকাজে ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডও ভাঙনের মুখে পড়ে। এই অবস্থায় সোয়া ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

পদ্মা সেতুর মূল কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে সেই দেশেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সাধারণত, যেকোনো উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, এই সময় এক বছর হয়ে থাকে। পদ্মা সেতুর বেলায়ও তা–ই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে যদি সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দেয়, তখন ঠিকাদারকেই নিজ খরচে সেটি ঠিক করতে হবে। এটাকে বলা হয় ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি)। এর আগে যমুনা নদীর ওপর সেতুর ক্ষেত্রেও এক বছর সময় রাখা হয়েছিল।