দুবাইয়ে দেড় বছরে ৩৪৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বাংলাদেশিরা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কানাডার বেগম পাড়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বাড়ি কেনায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। দুবাইয়ের সরকারি নথিপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লাখ দিরহাম বা ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্য়মে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত যেসব দেশের মানুষ জমি-বাড়ি কিনছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সবার আগে। দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রেও এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দুবাইয়ের আবাসন বাজারে বছরে ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন দিরহাম বা ৪৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার। সেই তুলনায় বাংলাদেশিদের ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ বড় কিছু নয় আর এই অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে বড়জোর ১০০ টি ফ্ল্যাট কেনা যাবে, এর বেশি কিছু নয়। বাংলাদেশিরা সেখানে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন, এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এই অর্থ বৈধপথে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, তা অবৈধপথেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

দুবাইয়ে বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার এই তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলারা। দুবাইয়ের এসব বিনিয়োগের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে এক কোটি দিরহাম বা ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে গোল্ডেন ভিসা দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা বলেন, কোভিডের ভরা সময়ে দেশ থেকে এ পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, সেই দুঃসময়েও কিছু মানুষ বিপুল অর্থ আয় করেছেন। এই অর্থ দেশে রাখা তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না।

ধনীদের চোখের মণি দুবাই

বিশ্বের ধনীদের দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। কয়েক বছর ধরেই এই বাড়বাড়ন্ত চলছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুবাইয়ের রেকর্ডসংখ্যক জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। দেশটির সরকারি নথি অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে।

আরও পড়ুন

অ্যারাবিয়ান বিজনেসের সংবাদে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। তথ্যানুসারে, এর আগে ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। শুধু ডিসেম্বর মাসেই দেশটিতে আট হাজার আবাসন লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি।

খালি জায়গা বিক্রি বেড়েছে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রস্তুতকৃত বাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।

চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বেড়েছে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলা বা সুরম্য বাড়ির দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।

তবে দাম বাড়ার হার এখনো ২০১৪ সালের পর্যায়কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ভিলা ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম এখনো সর্বোচ্চ দামের চেয়ে ২১ দশমিক ৫ ও ৪ দশমিক ২ শতাংশ কম।

আরও পড়ুন

একই সঙ্গে ভাড়াও বেড়েছে রেকর্ড হারে। দুবাইয়ে ২০২২ সালে অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলার ভাড়া বেড়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ১ ও ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

দুবাই শহরের কাছেই বিলাসবহুল আবাসনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গা পাম জুমেইরাহ্। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২ হাজার ৩২৪ দিরহাম এবং ভিলার দাম পড়ছে প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার ৯২১ দিরহাম।

ভাড়ার দিক থেকেও এই পাম জুমেরাহ সবার চেয়ে এগিয়ে। সেখানে বার্ষিক ভাড়ার পরিমাণ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫২ দিরহাম থেকে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৬ দিরহাম।

বাস্তবতা হচ্ছে, চাহিদা এত বেড়েছে যে দুবাইয়ে ভিলার ভাড়া এখন ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গড়ে ভিলার ভাড়া পড়ছে বার্ষিক ২ লাখ ৮২ হাজার ১৫০ দিরহাম-এটাও ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুন

বিশ্বের ধনকুবেরদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার অতি ধনীদের দীর্ঘ মেয়াদে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দিচ্ছে। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ হচ্ছে নগদ অর্থে।

পৃথিবীর সব দেশের ক্ষমতা ও সামর্থ্যবানেরা সেখানে বাড়ি কিনছেন। রাশিয়ার তেল ব্যবসায়ীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যেমন দুবাইয়ে বাড়ি কিনছেন, তেমনি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফুলেফেঁপে ওঠা পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও পাড়ি জমাচ্ছেন সেখানে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে। ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ, ও মুকেশ আম্বানি, তাঁরা এখন পরভূমে পরস্পরের প্রতিবেশী।

জানা গেছে, দুবাই শহরের বড় বড় আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে শত শত কোটি ডলার ঋণ আছে। একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধূসর তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ সে দেশে ঢুকছে-এমন সন্দেহ থেকেই তারা আরব আমিরাতকে ধূসর তালিকায় রেখেছে। সন্দেহ আরও বৃদ্ধির কারণ হলো, দুবাইয়ের ভূমি বিভাগ এসব বাড়ির ক্রেতাদের নাম প্রকাশ করে না।

ফুটবল বিশ্বকাপ ও মধ্যপ্রাচ্যের আকর্ষণ

কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে গেল। তখন দেশটিতে এমন অনেক কিছুই হয়েছে, যা সাধারণত দেশটিতে হয় না। কিন্তু পর্যটক টানতে তাদের এসব ছাড় দিতে হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবও নানাভাবে কঠোর শরিয়াহ্ আইন শিথিল করছে। নারীদের একা চলাফেরা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানোর অধিকারও দেওয়া হয়েছে সে দেশে। এমনকি সৌদি আরব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে-এমন সংবাদও প্রকাশ করেছে আরব অঞ্চলের এক গণমাধ্যম। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে আর তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে দুবাই।

আরও পড়ুন