উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে ৯ জুন, বৃহস্পতিবার। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, বাজেট হবে উদ্যোক্তাবান্ধব। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। বাজেট সামনে রেখে বিভিন্ন খাতের ছয়জন তরুণ উদ্যোক্তা তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, শুভংকর কর্মকার, সুমন কুমার দাশউত্তম মণ্ডল

রায়ানা হোসেন

আমরা ডেকো ইশো গ্রুপ তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতের পাশাপাশি আসবাব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আসবাবের ক্ষেত্রে আমাদের শুল্কনীতি অনেকটাই অসুবিধাজনক। কারণ, আসবাব আমদানির পাশাপাশি দেশে পণ্যটির উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা আছে।

তার মানে বিদেশ থেকে আসবাব আমদানি ও দেশে পণ্যটির উৎপাদন দুটোই পরোক্ষভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি আসবাব রপ্তানিতে বন্ডেডওয়্যার হাউসের সুবিধা দেওয়া হয় না। অথচ নানা কারণে বিশ্ববাজারে আসবাব রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই দেশীয় আসবাব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আমদানি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা এবং রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমার প্রত্যাশা, আগামী বাজেটেই কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) প্রত্যাহার করে যৌক্তিক জায়গায় নেওয়া হবে। কারণ, এসব কাঁচামাল আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না।

দেশে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। তরুণ উদ্যোক্তারা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, সে বিষয়ে তাঁদের দিকনির্দেশনা দিতে সরকারি পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে সেই বরাদ্দ কাজে লাগানো উচিত। মোটাদাগে আমাদের তরুণদের মাথায় শুধু তৈরি পোশাক খাতই গেঁথে আছে। ভবিষ্যতে কোনো খাতে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি জানানোর পাশাপাশি সে অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধি ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনে এভাবেই নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব।

দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি হচ্ছে। তাদের জন্য সরকার হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্কসহ নানা কিছু করছে। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরও ব্যাপক হারে প্রচার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাথায় প্রথম থেকেই ইনোভেশন (নতুন উদ্ভাবন) বিষয়টি মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। কারণ, ইনোভেশন ছাড়া আগামী দিনে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাজেটে কিছু করার থাকলে অর্থমন্ত্রী ভাবতে পারেন।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। সে জন্যও গবেষণা দরকার। রাশিয়া খুব কম সময়ের মধ্যে শীর্ষ খাদ্য উৎপাদক দেশ হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ভর্তুকিমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।

অন্যদিকে রাশিয়া যেটি করেছে, কৃষিপণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পরিবহনসুবিধা ভর্তুকিমূল্যে দিচ্ছে। কৃষিপণ্য যতবার হাতবদল হয়, ততবার দাম বেড়ে যায়। রাশিয়া সেটি বন্ধ করেছে। তাতে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য তো পাচ্ছেনই, সেই সঙ্গে সবাই একই দাম পাওয়ায় মান নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আমাদের দেশেও এমন কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে কি না, সেটি সরকার ভেবে দেখতে পারে। কারণ, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার সামর্থ্য অনেকেরই রয়েছে। আর এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ভর্তুকি দিলেও কৃষক কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, ভোক্তাদেরও বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।

রায়ানা হোসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইশো