এবার চামড়া সংগ্রহ হয়েছে কম

কয়েক বছর ধরেই কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমছে। এতে চামড়া খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই বাস্তবতায় চলতি বছর চামড়ার বাজার নিয়ে কথা বলেছেন একজন অর্থনীতিবিদ ও দুজন ব্যবসায়ী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রণব বল, শুভংকর কর্মকার আরিফুর রহমান

মো. মুসলিম উদ্দিন সভাপতি, বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এবার কী পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হলো?

মুসলিম উদ্দিন: এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ। আমাদের আড়তদারদের কাছে দেড় লাখ চামড়া ইতিমধ্যে চলে এসেছে। আমরা তা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছি। আরও প্রায় দেড় লাখ চামড়া বিভিন্ন উপজেলা—আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ এবং আশপাশের জেলায় সংরক্ষণ করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। সময় করে তা এখানে নিয়ে আসবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অন্যান্য বছরের চেয়ে কম সংগ্রহ হওয়ার কারণ কী?

মুসলিম উদ্দিন: করোনার কারণে মানুষ কোরবানি কম দিয়েছে। গত বছরও একই অবস্থা দেখেছি। মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই কোরবানি দিতে পারেনি। ফলে চামড়া কমে গেছে। এর আগে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করেছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কতজন আড়তদার চামড়া সংরক্ষণ করেছেন?

মুসলিম উদ্দিন: আমাদের সমিতিভুক্ত আড়তদার ১১২ জন। তার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জন চামড়া সংগ্রহ করেছেন। বাকিরা টাকাপয়সা হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তাই ব্যবসায়ী কমে গেছে। সমিতির বাইরে আরও ৬০-৭০ জন চামড়া সংগ্রহ করেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: চামড়া সংগ্রহের জন্য আপনারা ঋণ পান?

মুসলিম উদ্দিন: ব্যাংকগুলো ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেয়। আমাদের ঋণ দেয় না। কয়েক বছর ধরে লোকসান খেতে খেতে এবং বকেয়া টাকা আদায় করতে না পেরে অনেকে ফকির হয়ে গেছেন। সরকারের কাছে আবেদন করব, যাতে আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে আবার এই শিল্প চাঙা করার ব্যবস্থা করা হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ট্যানারির কাছে কত টাকা বকেয়া রয়েছে?

মুসলিম উদ্দিন: ট্যানারি মালিকদের কাছে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের আড়তদারেরা ২৫ কোটি টাকা পাবেন। ওই টাকা এখনো দেননি। ২০১৯ ও ২০২০ সালের টাকা মোটামুটি দেওয়া হয়েছে। বকেয়া না পেলে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কঠিন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ২০১৯ সালে অনেক চামড়া পচে গিয়েছিল। আপনারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুসলিম উদ্দিন: এবার একটা চামড়াও নষ্ট হয়নি। প্রশাসনের মনিটরিং ছিল। সুশৃঙ্খলভাবে সব চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এখানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে চামড়া বেশি দামে কেনেন। আমরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে কিনতে পারব না। এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩১ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এক ফুট কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ ও মজুরি বাবদ ১২ টাকা খরচ রয়েছে। এর বাইরে পরিবহন খরচ আছে। তাই যাঁরা এসব না বুঝে চামড়া কিনেছেন, তাঁরা ঠকবেন। বড় চামড়া ৪০০-৪৫০ টাকায়ও কিনেছি। মাঝারি ৩৫০ টাকায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কবে নাগাদ চামড়া ট্যানারি মালিকেরা নিয়ে যাবেন? সামনে লকডাউন রয়েছে। তাতে কি কোনো সমস্যা হবে?

মুসলিম উদ্দিন: তিন-চার দিনের মধ্যে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া চলে যাবে। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা থেকে বাকি চামড়া চলে আসবে। লকডাউনের কারণে আমাদের সমস্যা হবে না। কারণ, চামড়ার গাড়ি লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।